“মা মানেই নিঃশর্ত ভালবাসা, নিজের স্বার্থে সন্তানকে ব্যবহার মাতৃত্বকে বিকৃত করে।”— মাতৃত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে পৃথাকে খোঁচা সুদীপের! শ্রীময়ী ও কমলিনীর চরিত্রেই আসল মাতৃত্ব খুঁজে পান সুদীপ!

চিরসখা (Chiroshakha) ধারাবাহিকের স্বতন্ত্র ওরফে ‘সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের’ (Sudip Mukherjee) চোখে ‘মা’-এর সংজ্ঞা কিছুটা ব্যাতিক্রমী। তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস (International Mother’s Day) উপলক্ষে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মাতৃত্বের সংজ্ঞা তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, “জীবনে ‘মা’ শুধু একজন ব্যক্তিই নন, বরং একটি আবেগ, এক চিরন্তন অস্তিত্ব।” সুদীপ বলেন তার দুজন মা, একজন তাঁকে জন্ম দিয়েছেন, আর একজন প্রকৃতি মা। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন জীবনের যাবতীয় রসদ আমরা প্রকৃতি থেকেই পাই। তাই মায়ের মতোই প্রকৃতিও তাঁর জীবনে মাতৃ স্নেহের প্রতীক।

একজন বাবা হিসেবে সুদীপ মায়ের অবদানকে কখনওই তুচ্ছ মনে করতে চান না, বরং বারবার স্মরণ করিয়ে দেন সন্তানের জীবনে মা-ই প্রকৃত ভিত্তি। সুদীপ বলেন তিন সন্তানের বাবা হিসেবে শুধু বাস্তবেই নয়, পর্দার জীবনেও একাধিকবার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর অভিনয়ের থেকে তিনি উপলব্ধি করেছেন, মাতৃত্বের সংজ্ঞা কখনও একটা নয়। তিনি বলেন, “পৃথা ও বেণীর সঙ্গে আমার তিন সন্তান রয়েছে, এবং এই দুই নারীই আমার চোখে আদর্শ মা।

কিন্তু সেই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, যখন মা সন্তানের উপর নিজের স্বার্থ চাপিয়ে দেন বা নিজের স্বার্থে সন্তানকে ব্যবহার করেন, তখন সেই মাতৃত্ব বিকৃত হয়ে যায়।” এই বক্তব্যের মধ্যে তিনি নিজের অতীত ও আধুনিক সম্পর্কের জটিলতাকে তুলে ধরেছেন। সুদীপ মুখার্জির চোখে ‘মা’ মানেই নিঃস্বার্থ ভালবাসা আর ত্যাগের প্রতিমূর্তি। নিজের শৈশবের স্মৃতি ঘেঁটে তিনি বলেন, কীভাবে তাঁর মা একা হাতে সংসার সামলেছেন, ভাইদের মানুষ করেছেন, আবার নিজের শখও ধরে রেখেছেন।

বাবার উদাসীনতার বিপরীতে মায়ের কোমলতা, সহনশীলতা ও ভালোবাসাই যেন তাঁর জীবনে সবচেয়ে দৃঢ় প্রভাব ফেলেছে। তিনি এদিন তাঁর পর্দায় অভিনীত দুই পুরুষ চরিত্র ও তাঁদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নারীদের মধ্যে তুলনা করেন। তিনি বলেন এই দুটি চরিত্র করতে গিয়ে একজন মায়ের বিভিন্ন রূপ তার কাছে ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, “পর্দায় অভিনীত দুই চরিত্র—‘শ্রীময়ী’র অনিন্দ্য এবং ‘চিরসখা’র স্বতন্ত্র, দু’টি বিপরীত ধারার পুরুষ চরিত্র।

অনিন্দ্যর মধ্য দিয়ে দিয়ে উপলব্ধি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভঙ্গুরতা। যেখানে স্ত্রীকে অবহেলা করে বাইরে থেকে কাউকে নির্বাচনের মাধ্যমে একজন মানুষ কীভাবে নিজের সংসার ভেঙে ফেলে। অন্যদিকে, স্বতন্ত্রর চরিত্রে ফুটে উঠেছে এক নিঃশব্দ সহচর, যিনি কোনও সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই একজন মায়ের সংগ্রামে সঙ্গী।” এই দুই অভিজ্ঞতা সুদীপকে মায়েদের লড়াই ও মর্যাদা আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।

আরও পড়ুনঃ “তোমার মেয়ের বাবাই আমার ছেলের বাবা, বাড়াবাড়ি করো না” শ্রীময়ীর কটাক্ষের জবাব দিয়ে শান্ত গলায় তীব্র বার্তা পিঙ্কির!

শেষ কথায় সুদীপ মনে করিয়ে দেন—‘মা’ শব্দটা কোনও একমাত্রিক সংজ্ঞায় আটকে রাখা যায় না। তিনি হতে পারেন একজন আধুনিকা, একজন বিপ্লবী, একজন সংগ্রামী। কিন্তু যেকোনো পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তিনি একজন মা। বাবা হিসেবে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে তিনি মায়ের ভূমিকার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানাতে দ্বিধা করেন না। তাঁর এই অনুভব আজকের প্রজন্মের কাছে এক শিক্ষণীয় বার্তা যে সব বয়সেই, সব অবস্থাতেই, মা-ই থাকেন অবিচল।