সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায়, কিন্তু কিছু চরিত্র, কিছু সিনেমা থেকে যায় আমাদের মনের গহীনে। পুরনো দিনের বাংলা ছবির কথা উঠলেই প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটির একাধিক সুপারহিট ছবির কথা মনে পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’। ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি সেই সময় দর্শকদের মন জয় করেছিল দুর্দান্ত অভিনয় ও পারিবারিক গল্প দিয়ে। আজ, ২৫ বছর পর, জামাইষষ্ঠীর প্রাক্কালে সেই সিনেমা আবার ফিরছে প্রেক্ষাগৃহে।
ছবির প্রত্যাবর্তন মানেই শুধুই নস্টালজিয়া নয়, বরং সে এক আবেগ। চরিত্রগুলিও যেন সময়ের সঙ্গে গেঁথে থাকে মনে। ছবির মূল চরিত্র প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা-র পাশাপাশি যে চরিত্রটি মনে গেঁথে গিয়েছিল, তা হল ‘বিনোদিনী রায়’—ধনী শাশুড়ির চরিত্রে অনামিকা সাহার দুর্দান্ত অভিনয়। গয়নায় মোড়া, ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা সেই চরিত্র আজও দর্শকের মনে উজ্জ্বল। কিন্তু এত শক্তিশালী চরিত্রে অনামিকা সাহা অভিনয় করবেন—এই সিদ্ধান্ত নেওয়া এতটাও সহজ ছিল না।
তখন ইন্ডাস্ট্রিতে অনামিকা সাহা নামটা পরিচিত হলেও, অনেকের মনে সন্দেহ ছিল তাঁর সক্ষমতা নিয়ে। খলনায়িকার চরিত্রে কাজ করার পরও, এই রকম একটি শক্তিশালী ‘শাশুড়ি’ চরিত্রে তাঁকে নেওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী এবং নায়ক প্রসেনজিৎকে সতর্কও করেছিলেন অনেকে। কিন্তু তবুও তাঁদের বিশ্বাস অটুট ছিল।
এখানেই শেষ নয়। যাঁদের মনে সংশয় ছিল, তাঁরা তুলনা টেনেছিলেন হেমা মালিনীর সঙ্গে। কারণ এই একই গল্পে ১৯৯০ সালে হিন্দি ছবিতে হেমা মালিনী অভিনয় করেছিলেন সেই চরিত্রে। ফলে অনেকেই বলেছিলেন, “হেমা মালিনীর করা চরিত্রে অনামিকা কি পারবেন অভিনয় করতে?” এই মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়, কতটা লড়াই করে জায়গা পেতে হয়েছিল তাঁকে।
আরও পড়ুনঃ “খালি পেটে পুরস্কার নিতে গিয়েছিলাম, ফিরেছি চপ-মুড়ি খেয়ে”—অভাবের জীবনকথা শোনালেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়!
সেই সময়ের সমস্ত সমালোচনা, সন্দেহের দেওয়াল ভেঙে অনামিকা সাহা প্রমাণ করেছিলেন—তিনি উপযুক্তই ছিলেন ‘বিনোদিনী’র চরিত্রে। চরিত্রটি যে পরিমাণ ভালবাসা পেয়েছিল দর্শকের থেকে, তা আজও নজিরবিহীন। অনামিকা নিজেই জানান, “অনেকেই আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু বুম্বা (প্রসেনজিৎ) আর হরনাথদার উপর আমার চিরকাল কৃতজ্ঞতা থাকবে। তাঁরাই বিশ্বাস করেছিলেন আমার উপর।” আজ এত বছর পরেও সেই বিশ্বাস আর সেই চরিত্র দর্শকের মনে অমলিন।