“সত্যজিৎ রায় কথা দিয়েছিলেন, আর কখনও ডাকবেন না!”— বাবাকে দেওয়া কথার জন্য অলকনন্দাকে আর ডাকেননি সত্যজিৎ রায়! কোন শর্তের বিনিময়ে পেয়েছিলেন অলকনন্দা রায়কে?

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটা নাম, তিনি হলেন ‘সত্যজিৎ রায়’ (Satyajit Ray) । যখন প্রথমবার রঙিন ছবির ভাবনা অসে তাঁর মাথায়, আকাঙ্ক্ষা ছিল নতুন মুখ তুলে আনার। সেই মতো এদিক ওদিক অভিনেত্রী খুঁজতে শুরু করেন। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবির জন্য খুঁজছিলেন এমন এক নির্দিষ্ট চেহারার নায়িকা, যে তাঁর নিজের আঁকা স্কেচের সঙ্গে মিলে যাবে। সেই খোঁজে একদিন উঠে এল এক তরুণীর নাম—’অলকনন্দা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Alaknanda Roy Banerjee) । মাত্র ১৮-এর কোঠায় পা রাখা সেই মেয়েটি পড়াশোনায় মেধাবী, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী।

অভিনয়ের জগৎ নিয়ে কোনও স্বপ্ন বা আকর্ষণই ছিল না তাঁর। অলকনন্দাকে পছন্দ করলেও পরিবার ছিল ভীষণ রক্ষণশীল। কোনও ভাবেই মেয়েকে সিনেমায় পাঠাতে রাজি ছিলেন না তাঁর মেজ জ্যাঠা ও বাবা। তখন নিজেই তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ। বহু বোঝাবুঝি, আলোচনার পরে অবশেষে মিলেছিল অনুমতি। তবে শর্ত ছিল একগুচ্ছ—এই একটি ছবির পর আর কোনও চলচ্চিত্রে অভিনয় নয়, কোনও পত্রিকায় ছবি নয়, রাতের অনুষ্ঠানেও ডাক নয়।

এবং এরপর আর কোনও পরিচালক যেন তাঁকে ডাকতে না পারেন, সেই দায়িত্বও সত্যজিৎ রায়কেই নিতে হয়। পরিচালক নিজের মুখে অলকনন্দার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন—এই একটি ছবিতেই শেষ, এরপর আর কখনও নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালনও করেন। পরবর্তীতে অলকনন্দা হয়ে উঠেছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘার ‘মনীষা’, তবে তারপর সত্যিই সত্যজিৎ রায়ের কোনও ছবিতে তাঁকে দেখা যায়নি। অলকনন্দার কথায়, “উনি আমাকে স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করতে দেননি, বরং বাড়ি এসে পড়ে শুনিয়ে দিতেন।

পোশাকের রং বেছে দিতেন, মাকে চিঠি পাঠাতেন কোন দর্জির দোকানে মাপ দিতে হবে।” এমন যত্নে তৈরি হয়েছিল মনীষার চরিত্র। বড় পর্দায় কাঞ্চনজঙ্ঘা মুক্তি পায় ১৯৬২ সালে। প্রথমে তেমন সাড়া না পেলেও, পরবর্তী দশকে এই ছবিই হয়ে ওঠে বাংলা সিনেমার এক রত্ন। অথচ, ছবির মুক্তির পরেই অলকনন্দার বিয়ে হয় আরেক রক্ষণশীল পরিবারে, যেখানে ‘সত্যজিতের নায়িকা’ পরিচয়ই হয়ে দাঁড়ায় গ্লানির কারণ। শ্বশুরবাড়ির লোকজন নাকি তাঁকে পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন।

আরও পড়ুনঃ ‘রাতের বেলা ভূতের ভয় পেলে ছাদে বাথরুমে নিয়ে যেত মা!’— ফাদার্স ডে স্মৃতিচারণে বাবার বদলে মায়ের সম্পর্কে আবেগঘন বার্তা সায়ক চক্রবর্তীর!

কারণ কেউ যদি বলেন তাঁদের পুত্রবধূর টাকাতেই সংসার চলে—এই ভয়ে। এরপর বহু বছর অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন অলকনন্দা। কেবল একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। পরে পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁকে আবার পর্দায় ফেরান ‘ফেরা’ ছবির মাধ্যমে। তবু অলকনন্দার জীবনের এক অমূল্য অধ্যায় আজও থেকে যায় সত্যজিৎ রায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ঘেরা সেই একমাত্র ছবি, যা তাঁকে বানিয়েছিল বাংলার প্রথম রঙিন ছবির নায়িকা।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।