“হিরোইন হতে চাইনি, অভিনেত্রীই ভালো আছি!” “নতুন প্রজন্মের দায়িত্ববোধ কম, বড়দের সম্মান করতে জানে না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করায়!”— ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রজন্মকে নিয়ে বি’স্ফো’রক মৌসুমী সাহা!

মেনস্ট্রিম অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নয়, বরং অভিনয়কে সত্যি করে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। কিশোরী বয়সে পরিচালক তরুণ মজুমদারের ছবিতে প্রথমবার অভিনয়ের সুযোগ পান ‘মৌসুমী সাহা’ (Mousumi Saha) ,সেই অভিজ্ঞতা ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁকে। অভিনয়ের নেশা ধীরে ধীরে তাঁকে টেনে নিয়ে যায় মঞ্চের দিকে। থিয়েটারেই তৈরি হয় তাঁর অভিনয়ভাষা এবং অনুভবের ঘনত্ব। আর সেখান থেকেই পা রাখেন বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ে।

বাংলা ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’-র গল্পে এক গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রে তিনি যেভাবে ধরা দিয়েছিলেন, তাতেই ধরা পড়েছিল তাঁর অভিনয়ক্ষমতার গভীরতা। প্রেম করতেন এক দেশভক্তের সঙ্গে, অথচ শেষমেশ বাবা তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেন এক জমিদারের সঙ্গে। এই জমিদারের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবেই তাঁকে দেখা গিয়েছিল পর্দায়। টানা ১৪০০ পর্বে অভিনয় করা এই চরিত্র মৌসুমী সাহার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ‘জন্মভূমি’ ধারাবাহিকটি চলেছিল প্রায় সাত বছর, যা তখনকার সময়ে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।

মঞ্চজীবনের প্রথমদিকে তিনি একাধিক শো করেছেন, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকেও নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই নাটকের সূত্রেই আলাপ হয় তাঁর স্বামীর সঙ্গে, পরে প্রেম এবং পারিবারিক সম্মতিতে বিবাহ। যদিও তাঁর শ্বাশুড়ি চাইতেন না তিনি অভিনয়ে থাকুন, ফলে বহু কাজ তিনি হাতছাড়া করেছিলেন। কিন্তু স্বামী তাঁর পাশে ছিলেন বরাবর। স্বামীর সাহস এবং সমর্থনেই ফের তিনি নতুন উদ্যমে ফিরে আসেন অভিনয়ে।

এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছোটপর্দা হোক বা বড়পর্দা—প্রতিটি চরিত্রে নিজস্ব ছাপ রেখে গিয়েছেন মৌসুমী। কখনও মা, কখনও দিদা, কখনও বা সাহসিনী নারীর চরিত্রে তিনি প্রতিবারই আলাদা আলোয় ধরা দিয়েছেন দর্শকের সামনে। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন জি বাংলার ‘তুই আমার হিরো’ ধারাবাহিকে, যেখানে তিনি এক ঠাকুমার চরিত্রে অভিনয় করছেন একগুচ্ছ নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা কেমন?

আরও পড়ুনঃ অপমানিত বাবার সম্মান ফেরাতে ব্যাঙ্ক খুলবে মেয়ে! স্টার জলসায় আসছে নতুন ধারাবাহিক ‘লক্ষ্মীঝাঁপি’!

নতুন প্রজন্মের সহ-অভিনেতাদের নিয়ে তাঁর ভাবনা বেশ স্পষ্ট। তিনি মনে করেন, আজকের তরুণ-তরুণীরা প্রাণবন্ত হলেও তাঁদের মধ্যে দায়িত্ববোধ কিছুটা কম। সময়ানুবর্তিতা নেই, প্রেম-ভালোবাসাতেও সেই গভীরতা নেই যা একসময় ছিল। মৌসুমীর মতে, বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব প্রকট। গল্পগুলো ঘুরেফিরে এক হয়ে যাচ্ছে, তাই প্রতিভা থাকলেও অনেকেই টিকতে পারছে না। তবুও তিনি আশাবাদী, কারণ ভালো কাজ এবং শ্রদ্ধা থাকলে কোনও জেনারেশনই একেবারে হারিয়ে যায় না।