“জীবনে হারতে শেখা জরুরি”—নতুন প্রজন্মের দুর্বলতার মূল কারণ বললেন ক্যান্সারজয়ী অভিনেতা চন্দন সেন!

নতুন প্রজন্মের জীবনযাত্রা আর অভ্যাস ঘিরে এখন সমাজজুড়ে একটাই প্রশ্ন—বাচ্চারা কি স্বাভাবিক বিকাশ থেকে সরে যাচ্ছে? মোবাইল ফোন, ট্যাব বা অন্যান্য ডিজিটাল গ্যাজেটের প্রতি এই অল্পবয়সীদের আসক্তি ক্রমেই উদ্বেগজনক আকার নিচ্ছে। কোথাও যেন কমে যাচ্ছে ছুটে খেলার আনন্দ, রোজকার শরীরচর্চা, মাঠে নেমে হার-জিত শেখার অভ্যেস। সম্প্রতি এই বিষয়েই মুখ খুললেন বর্ষীয়ান বাংলা অভিনেতা চন্দন সেন।

কিছুদিন আগে নিজেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন চন্দন সেন, আর সেখান থেকেই জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি আরও গভীর হয়েছে। ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তিনি বুঝেছেন—জীবনে যত বড় বিপদই আসুক, আশেপাশের মানুষ, মনোবল আর জীবনের প্রতি ভালোবাসাই এগিয়ে রাখে। সেই সময় থিয়েটার আর অভিনয়ের প্রতি তার নিরন্তর ভালোবাসাই তাকে চাঙ্গা রেখেছিল। এমনও হয়েছে, যখন কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই তিনি থিয়েটারের জন্য মঞ্চে উঠেছেন। ঠিক তেমনই, অনেক ডাক্তারও বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন এই শিল্পীর। সেই কৃতজ্ঞতা আজও তিনি প্রকাশ করে চলেছেন।

তবে এবার চন্দনের বক্তব্য একেবারে সমাজমুখী। তার আক্ষেপ—আজকের শিশুরা শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল, আর তার পিছনে বড় কারণ মোবাইল আসক্তি। তিনি বলেন, “আজকালকার বাচ্চারা মাঠে খেলতে যায় না, শারীরিক কসরত করে না। শুধুমাত্র মোবাইল, গেমস আর ইউটিউব-নির্ভর জীবন। ফলত, ছোটবেলা থেকেই শরীর ভেঙে পড়ছে।” একথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, শুধু প্রযুক্তি নয়, জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার শিক্ষাটাই হারিয়ে যাচ্ছে।

চন্দনের মতে, খেলার মাধ্যমে বাচ্চারা একটাই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেখে—‘হারতে শেখা’। আর হার না শিখলে জীবনের ব্যর্থতা সামলাতে তারা ভবিষ্যতে অক্ষম হবে। চন্দনের কথায়, “জীবনে হারটা জরুরি। হারলে তবেই তো শেখা হয়।” তিনি এও বলেন, শিশুকাল থেকে যদি কেউ সব সময় জিততে অভ্যস্ত হয়, তাহলে বড় হয়ে সামান্য বিপর্যয়েও তারা ভেঙে পড়বে। তাই খেলার মাঠে নামা এবং সেখানে হার-জিত—এই অভিজ্ঞতাগুলো শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ “একসাথে পথ চলা আর হলো না, শেষ দেখার পর শুধুই কান্না!” ভেঙে গেল রুমকি-ঝুমকি জুটি! বোনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দেবশ্রী রায়!

সবশেষে তিনি বলেন, শুধুমাত্র মোবাইল বা গ্যাজেট নয়, বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ব্যর্থতা মেনে নেওয়া আর তার থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই গঠন করবে আগামী দিনের প্রজন্মকে। তাই অভিভাবকদের উদ্দেশে তার বার্তা স্পষ্ট—বাচ্চাদের শুধু মোবাইল ধরিয়ে দিলে চলবে না, তাদের মাঠে নামতে দিতে হবে, খেলার মধ্যে দিয়ে জীবন চিনতে শেখাতে হবে। কারণ খেলাধুলা শরীরের পাশাপাশি মনও গড়ে তোলে। আর সেটাই আজকের সমাজের সবচেয়ে বড় অভাব।