অভিনেত্রী বানানোর বদলে প্রযোজকের অ’শ্লীল প্রস্তাব! গায়ের রঙ ফর্সা বলে কাজ পাননি! আত্ম’হ’ত্যার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘গৃহপ্রবেশ’-এর ‘জিনিয়া’ যুক্তা চক্রবর্তী! পর্দায় যাঁর উপস্থিতিতে আগুন লাগে, জানেন তাঁর লড়াইয়ের গল্প?

টেলিভিশনের পর্দায় যাকে দেখে আজ দর্শক চেনেন, ভালোবাসেন, প্রশংসায় ভরিয়ে দেন— সেই ‘যুক্তা চক্রবর্তী’র (Yukta Chakraborty) জীবন কিন্তু কখনওই মসৃণ ছিল না। অভিনেত্রী আজকের দিনে যেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন না কেন, তাঁর পথচলা শুরু হয়েছিল একেবারে শূন্য থেকে। নিজেই বলেন, “লড়াই করছিলাম, করছি আর করবও।” এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে রুখে দাঁড়াতে শিখিয়েছে—সেই সময় থেকে যখন দিনের পর দিন দাড়িয়ে থেকেও প্রোডাকশন হাউসের ফটক পেরোতে পারেননি, যখন ‘ফর্সা’ চেহারা হয়েও ‘বাঙালির মতো দেখতে নও’ বলে তাঁকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এমনকি মনের ওপর এমন চাপ এসেছিল যে, জীবনের ইতি টানার কথাও একসময় মনে হয়েছিল তাঁর। তবু পরিবার আর নিজের লড়াইয়ের প্রতি বিশ্বাস ধরে রেখে বাঁচার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যুক্তা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, বাবা ব্যবসায়ী হলেও আর্থিক দিক দিয়ে পরিস্থিতি ছিল চ্যালেঞ্জের। তাই জীবনের একটা সময় তিনি চাকরি নিয়েছিলেন উইপ্রো-তে। কাজের ফাঁকে ক্লাসিক্যাল ডান্স চালিয়ে গেছেন, কারণ যুক্তা একজন প্রশিক্ষিত ভারতনাট্যম ডান্সার। বিভিন্ন শোয়ের মাধ্যমে কলকাতার মঞ্চে পারফর্ম করতে করতেই একদিন সুযোগ আসে প্রথম ধারাবাহিকে।

সান বাংলার এই ধারাবাহিকে তিনি একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি পেয়েছেন আকাশ আটের “বিবেকানন্দ”তে ‘সুভাষিনী’ চরিত্রে সুযোগ, যা ছিল একটি মনে রাখার মতো ইতিবাচক চরিত্র। তখনই হঠাৎ জীবনে আসে বড় ধাক্কা—বাবার ক্যা’ন্সার ধরা পড়ে। কাজ ছিল না, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কও ভেঙে যায়, কাছের মানুষরা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তবুও তিনি ভেঙে পড়েননি। বাবার চিকিৎসা সফলভাবে শেষ হওয়ার পর আবার ফিরে আসেন জীবনের দৌড়ে। এবং সেই দৌড়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক এনে দেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।

‘আবার প্রলয়’ ওয়েব সিরিজে ছোট চরিত্রে সুযোগ দিয়ে তিনিই যুক্তাকে পর্দায় ফিরিয়ে আনেন। এরপর সুরিন্দর ফিল্মস-এর ‘খায়াপা ৪’, রোহন ভট্টাচার্য ও আরিয়ান ভৌমিকের সঙ্গে ‘কর্কট’ ছবিতে মুখ্য চরিত্র, রণজয় বিষ্ণুর সঙ্গে মিউজিক ভিডিও এবং ‘ভ্রামহার্জুন’ ছবিতে অনিন্দ্যর বিপরীতে জুটি—এক এক করে একাধিক কাজ আসতে শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই চলে যান তাঁর প্রাণের মানুষ! দিদা, যিনি যুক্তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। দিদার মৃত্যুর দিন ভোরবেলায় তিনি প্রিয়জন হারানোর শোক বুকে নিয়েই সকাল যান শুটিংয়ে।

শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ৯টায় পৌঁছে যান ‘মধুর হাওয়া’ ধারাবাহিকে, যেখানে তাঁর চরিত্র ছিল ‘তিয়াশা’—এবং সেই দিন ছিল তাঁর বিয়ের সিন। সমস্ত কান্না চেপে সারাদিন সেই দৃশ্যের শুটিং করেছেন। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় চমক আসে ‘গৃহপ্রবেশ’ ধারাবাহিকে ‘জিনিয়া’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে। রাজ চক্রবর্তী নিজে ফোন করে তাঁকে জানান যে তিনি চাইছেন যুক্তা দ্বিতীয় মুখ্য চরিত্র করুক। যুক্তা তখনও বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমন সুযোগ তাঁর কপালে এসে ধরা দেবে।

আরও পড়ুনঃ মারণ রোগের মুখে ছাই, নাট্যমঞ্চেই শুরু জীবনের জয়গাথা! চন্দন সেনের নির্দেশনায় ক্যা’ন্সারজয়ীদের অভিনব লড়াই! ক্যা’ন্সারে আক্রান্তদের আবার আলোয় ফেরাতে চান অভিনেতা! চিকিৎসা নয়, এবার অভিনয়ই হবে অস্ত্র!

অভিনেত্রীর কথায়, “কিন্তু রাজদার একটাই কথা ছিল—’তুই পারবি'” সেই বিশ্বাস আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। দর্শক ভালোবেসেছেন ‘জিনিয়া’ চরিত্রকে। আর যুক্তা নিজেও নিজের লড়াইয়ের ফসলকে ভালোবাসতে শিখেছেন। আজও তিনি প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি আবিষ্কার করেছেন নিজের আর এক দিক—লিখতে পারেন কবিতা, যা আগে কখনও ভাবেননি। ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন নিজের ভেতরের আর এক শিল্পীকে। তাঁর জীবন গল্পটা ঠিক একেকটা কবিতার মতোই, যার প্রতিটা ছন্দেই লুকিয়ে আছে সাহসের রূপকথা।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।