বাংলা ভাষা আন্দোলনের মঞ্চে প্রসেনজিৎ! অতীতে বলেছিলেন ‘‘বাংলায় কথা বলা দরকার কি?’’ এবার “বাংলা ছিল, আছে, থাকবে” ঘিরে তুমুল বিতর্ক! ‘ভূতের মুখে রাম নাম!’ ‘দ্বিচারিতারও একটা সীমা থাকে!’ ‘নিজে বাংলায় লজ্জা পায়, সে করবে রক্ষা!’— পাল্টা কটাক্ষ সমাজ মাধ্যমে!

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ভিনরাজ্যে অত্যাচার ও বাংলা ভাষা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগে উত্তাল গোটা বাংলা। ‘বাংলায় কথা বলার অপরাধে’ আজও যেসব মানুষ লাঞ্ছিত, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজপথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও। ঠিক সেই সময়েই ‘বাংলা ভাষা রক্ষার’ ডাক দিলেন টলিউড সুপারস্টার ‘প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়’ (Prosenjit Chatterjee)। বললেন, “বাংলা ভাষা ছিল, আছে, আর থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে আছি।” শুনতে দারুণ লাগে, না?

কিন্তু সমস্যা একটাই—এই কথাটা বলছেন সেই মানুষ, যিনি মুম্বইয়ে সাংবাদিকের বাংলা প্রশ্ন শুনে ঠোঁট বেঁকিয়ে পালটা বলেছিলেন, “বাংলায় কথা বলা দরকার কি?” মানে তখন বলিউডের আলো ঝলমলে প্রেস মিটে বাংলার নাম শুনেই তাঁর লজ্জা লেগে গেছিল, আর এখন বাংলা ভাষা রক্ষার মঞ্চে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে বাংলার প্রতি প্রেমের বার্তা দিচ্ছেন! এত তাড়াতাড়ি চরিত্র বদল যেন আরও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে! কেউ বলছেন, “বাংলা ভাষার পক্ষে গলা ফাটানোটা যখন ক্যামেরা বা ভোটের মাঠে কাজে দেয়, তখনই তার প্রেম উথলে ওঠে!

এমনটাই এখনকার ‘ন্যারেটিভ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” “বাংলার প্রতিনিধিই যদি হন, তাহলে তো একটু দায়িত্বশীলতা দেখাতে হয়!”— এই একই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অভিনেতা। একজন বলেছেন, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মুখ হয়ে যদি আপনি নিজেই বাংলা শুনলে অস্বস্তিতে পড়েন, তাহলে নতুন প্রজন্মের অভিনেতারা তো করবেই!” কেউ আবার কটাক্ষ করে বলেছেন, “যিনি নিজের ভাষার প্রশ্ন শুনেই মুখ কাঁচুমাচু করেন, তিনি বাংলা ভাষা রক্ষার আইকন হয়ে উঠবেন কীভাবে?” প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে সমাজ মাধ্যমে।

কেউ আবার বলেছেন, “একবার ভাবুন, আপনি যদি সাংবাদিকের প্রশ্নটা হিন্দিতে শুনে হাসিমুখে উত্তর দিতেন, আর বাংলা শুনে এমন মুখভঙ্গি না করতেন—তাহলে আজ আপনাকে এমন মুখরক্ষা করতে হতো না। এমনও নয় যে মানুষ ভুল করে না। ভুল হতে পারে, কিন্তু সেটা স্বীকার করে চুপ থাকাই শ্রেয়।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যিনি কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেই মানুষ হঠাৎ আবার বাংলা ভাষার হয়ে মঞ্চে উঠলে, সাধারণ মানুষ কি প্রশ্ন তুলবে না? এখন সমাজ মাধ্যমের যুগে, সবাই সব মনে রাখে।

আরও পড়ুনঃ মাত্র ৫৩ বছরেই জনপ্রিয় টলি অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া! ৫০ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়েছিল, তবুও শেষরক্ষা হল না! কোটি টাকার চিকিৎসাতেও বাঁচানো গেল না তাঁকে!

শেষ কথা একটাই—ভাষার আন্দোলন হোক মন থেকে, অভিনয় করে নয়। বাংলা ভাষা যদি সত্যিই আবেগ হয়, তবে তা যেন শুধু ভোট, ক্যামেরা বা ইভেন্টে সীমাবদ্ধ না থাকে। ভাষা রক্ষার লড়াই কেবল লাইন পড়ে বলা বুলি নয়, এটা নিরন্তর মননের জায়গা। বাংলা সিনেমার নায়ক, তাঁকে দেখেই তো নতুন প্রজন্ম শিখবে—তাই তিনিই যদি দ্বিচারিতা করেন, তার প্রভাব অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অতএব, একটু অন্তর থেকে ভাবা উচিত। না হলে এই আন্দোলনটাও মানুষের চোখে হয়ে যাবে—আরেকটা অভিনয় মাত্র।