দু’বেলা দুমুঠো খাওয়ার পর্যন্ত ক্ষমতা ছিলনা! তীব্র আর্থিক অনটনেও মা আমাদের বুঝাতে দেননি যে আমাদের কিছু নেই! খলনায়িকা হয়েও জীবনে নায়িকা, জানুন অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী ঘোষের শৈশবের কাহিনী!

বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ, অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী ঘোষ। খলনায়িকার চরিত্রে দর্শকরা যেমন তাঁকে ঘৃণা করে ভালোবেসেছেন, তেমনই বাস্তব জীবনে তাঁর আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম বহুজনকে অনুপ্রাণিত করেছে। অভিনয়ের পর্দার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্নেহময়ী মা এবং এক সাহসিনী মেয়ের গল্প যেন নতুন করে ধরা দিল সম্প্রতি। এক সাক্ষাৎকারে চান্দ্রেয়ী ও তাঁর মা, বর্ষীয়ান নৃত্যশিল্পী পূর্ণিমা ঘোষ তুলে ধরলেন তাঁদের জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলির কথা, যা সাধারণ দর্শকের চোখে অদৃশ্য থেকে যায়।

চান্দ্রেয়ীর শৈশব মোটেও ঝলমলে ছিল না। বাবার কর্মহীনতা ও পারিবারিক আর্থিক অনটনে তাঁরা কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন। এমন সময় ছিল যখন পরিবারের কাছে দুবেলা খাওয়ার মতো অর্থও ছিল না। মাসি তাঁদের পাশে দাঁড়ালেও, মায়ের সাহস আর পজিটিভ মানসিকতা ছিল মূল ভরসা। চান্দ্রেয়ী জানান, “আমার মা কোনওদিন আমাদের বুঝতে দেননি যে আমাদের কিছু নেই। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা মা-ই।” এই অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তার পিছনে ছিলেন তাঁর মা পূর্ণিমা ঘোষ।

পূর্ণিমা ঘোষ শুধুমাত্র একজন মা নন, একজন সংস্কৃতিসেবীও। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরী নৃত্যশিল্পী হিসেবে বাংলা তথা ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে পরিচিত। ৮৩ বছর বয়সে দাঁড়িয়েও নাচে-গানে সমানভাবে সক্রিয় পূর্ণিমা। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় তাঁর একটি ভিডিও, যেখানে তিনি ইমন চক্রবর্তীর গানে নৃত্য পরিবেশন করেন—যা দেখে গায়িকা নিজেই অবাক হয়ে প্রশংসা করেন। হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির পরেও আবার মঞ্চে ফিরেছেন তিনি।

২৫ বছরের অভিনয়জীবনে ‘মন্টু পাইলট’, ‘বেহুলা’, ‘কিরণমালা’-সহ একাধিক ধারাবাহিকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছেন তিনি। বড় পর্দাতেও ‘ব্ল্যাক’-এর মতো সিনেমায় তাঁকে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এসবের আড়ালেই ছিল এক চুপচাপ যুদ্ধ—নিজেকে গড়ে তোলার যুদ্ধ, সংসার বাঁচানোর যুদ্ধ।

আরও পড়ুনঃ কমলিনীর বিরুদ্ধে বুবলাইয়ের মনে আরও বিষ ঢালছে চন্দ্র-বর্ষা! ‘চিরসখা’য় নতুনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায় চন্দ্র! মায়ের প্রেম মেনে নিতে না পেরে বিপদে বুবলাই, মৃ’ত্যুর নাটকের ছক!

এই সাক্ষাৎকারে চান্দ্রেয়ী বলেন, “আজ মা আমার মায়ের চেয়ে অনেক বেশি—আমার মেয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি ওকে আগলে রাখি।” জীবনের কঠিনতম সময়গুলো একসঙ্গে হাত ধরে পার করেছেন মা-মেয়ে। পূর্ণিমা ঘোষের ‘সুরঙ্গমা’ নৃত্যপ্রতিষ্ঠানে এখনো নিয়মিত ছাত্রদের শিক্ষা দিয়ে চলেছেন তিনি। শুধুমাত্র শারীরিক অনুশীলন নয়, বরং বয়স মানেই ক্লান্তি এই ধারণাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছেন পূর্ণিমা।