সঙ্গীত শিল্পী ‘শ্রাবণী সেন’ (Srabani Sen) -এর কণ্ঠকে সবাই রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক সরল, নিষ্কলঙ্ক আভাস হিসেবেই চেনেন। তার বাড়ির বসবার ঘরটা দেখলেই বোঝা যায়, রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিত্যসঙ্গী। মায়ের ছবির সঙ্গে বিশ্ব কবির ছবিও স্থান পেয়েছে সর্বত্র। কোনও রূপ-আলংকারে বাড়ি সাজানো নেই, তবু সব জায়গায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের (Rabindra Sangeet) ছোঁয়া। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপবার্তায় তিনি নিজেও বললেন, তিনি মূলত রবীন্দ্রনাথের গানেই থাকেন, অন্যান্য গান গাওয়ার ইচ্ছা কখনওই করেনি। কারণ সব ধরনের অনুভূতিই তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতে খুঁজে পান।
শ্রাবণীর বিশ্বাস, এখনও কেবল রবীন্দ্রসঙ্গীতই গেয়ে পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হওয়া সম্ভব। মানুষ তাঁকে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী’ হিসেবে চেনে এবং তিনি নিজেও তাই চেয়েছেন বরাবর। আজও শ্রোতারা আবদার করলে, তার কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতই পাবেন। এক্ষেত্রে তিনি অন্যদের বিরুদ্ধে কড়া না বললেও স্পষ্ট করে জানালেন, কেউ যদি রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক গান, নজরুলগীতি বা গজলও ভালোভাবে করে থাকেন, তা হলে সেও স্বীকৃতি পেতে পারেন। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতের শুদ্ধতা আলাদা ভাবেই রক্ষা করা উচিত।
ডিজিটাল যুগে গান শেখার ধরনে বদল আসায় শ্রাবণী মনে করে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এখন বহুজন ইউটিউব দেখে কিংবা সরাসরি স্বরলিপি না মেনে গান তুলে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কণ্ঠে সুর থাকলেও বাণীপ্রধান ওই গানগুলোর ভাব ঠিকমতো ধরা পড়ে না। তিনি স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের ‘একলা গীতবিতান’-এর মতো রেফারেন্সগুলোর প্রশংসা করে বলেন, আজও সেগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যবান। রবীন্দ্রসঙ্গীত যেহেতু শব্দেই শক্তি, তাই শুধুমাত্র সুরকে অনুকরণ করলে গানের অনেক মর্ম হারিয়ে যায়।
শ্রাবণী ডিজিটাল যুগের দ্রুততার কথাও মানেন। আজকাল রাতেই রেকর্ডিং, সকলেই ভিডিও আপলোড —এভাবে সঙ্গীতের ত্রুটি শুধরে নেওয়ার সময় পাওয়া যায় না। ফলে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী ভুলভাবেই গান পোস্ট করেন এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তিনি এটাকে পণ্যের মতো হয়ে যাওয়া বলেই দেখেন। তিনি কখনওই বলতে চান না যে এই গানগুলো খারাপ, বরং সমস্যা হলো যে যারা সত্যিই গভীরভাবে চর্চা করছে, তারা প্রায়শই সেই চর্চার ফল দেখাচ্ছে না—এটিই তাঁর উদ্বেগ।
আরও পড়ুনঃ ‘এ. এস.আর’ হিসেবে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর আর্য সিংহ রায়কে মানতে নারাজ দর্শকরা! ‘এ. এস. আর’ একজনই ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’র অরণ্য সিংহ রায়! ‘এ. এস. আর’ চরিত্রে জীতু নাকি যশ কে বেশি পছন্দের আপনাদের?
নিজে যে যাত্রাপথ অতিক্রান্ত করেছেন, তাতে নিয়ম, আত্মশৃঙ্খলা ও মায়ের শিক্ষা বড় ভূমিকা রেখেছে শ্রাবণীর। ভূগোলে স্নাতকোত্তর, সাংবাদিকতা ও লেখা–সব কিছু ছাড়ে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতে স্থিরতা পেয়েছেন। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছেন ভঙ্গিমাহীন, স্বরলিপি মেনে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া। জীবনে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, স্বাস্থ্যের কারণে কখনও উচ্চ স্বরে গাইতে পারেন না, তাই গান নির্বাচনে সে সব বিবেচনা করেন। যখন সময় হবে, নিজের ইচ্ছে মতো সেই জায়গা ছেড়ে দিয়ে নতুন প্রজন্মকে সুযোগ দেবেন—এটাই তাঁর প্রতিজ্ঞা।