শৈশবের ক্লান্ত সকাল, রাতভর পরিশ্রম, আর অপমানের তীব্র যন্ত্রণা—এই সবই জড়িয়ে রয়েছে অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর জীবনের সঙ্গে। ক্যামেরার সামনে যাঁকে দেখে আমরা হাসি, বাস্তবে তাঁর অতীত লুকিয়ে রাখে হাজারো যন্ত্রণা, অভাব আর অপমান। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের সেই অন্ধকার দিনগুলির কথা তুলে ধরলেন প্রবীণ এই অভিনেতা।
ছোট বয়সেই বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল শঙ্করকে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে শুরু হয় এক কঠিন জীবনের পথচলা। কোনওরকমে খাওয়া-দাওয়া জোটাতেন, এমনকী একসময় বাড়ি ভাড়াও দিতে পারতেন না তাঁরা। ফলে মা-ছেলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন কলকাতার এক বস্তিতে। সকালে স্কুল, আর রাতের বেলা যেতেন একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে। ক্লান্তির চোটে কখনও কখনও স্কুলে বসেই ঘুমিয়ে পড়তেন।
সেই সময় এক শিক্ষক ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়া দেখে শঙ্করকে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে বলেছিলেন, “চুরি করিস নাকি তুই!”—এই অপমানিত স্মৃতি আজও তাঁকে তাড়া করে ফেরে। জীবনের এমন অপবাদ কখনও ভুলতে পারেননি তিনি। কিন্তু হার মানেননি, লড়াই করেছেন, এগিয়েছেন ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্যপথে।
অসহায় সময়েই শঙ্করের জীবনে আশার আলো হয়ে আসেন সোনালী চক্রবর্তী। তখনও তিনি অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পাননি, ছিলেন এক গানের শিক্ষিকা। ছেলেমেয়েদের গান শেখাতেন, আর সেই সামান্য উপার্জন তুলে দিতেন শঙ্করের হাতে। শুধু আর্থিক নয়, মানসিকভাবেও এই সংগ্রামী অভিনেতার পাশে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন সোনালী।
সোনালী ছিলেন একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। শঙ্করের দারিদ্র, তাঁর সংগ্রামী জীবন মেনে নিতে পারেননি সোনালির আত্মীয়-পরিজনেরা। তবু পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালবাসার মানুষের হাত ধরেছিলেন সোনালী। একসঙ্গে লড়াই করে তৈরি করেছিলেন তাঁদের ছোট্ট সংসার। পরে দু’জনেই অভিনয়ের জগতে প্রতিষ্ঠা পান, কিন্তু সেই প্রেমে কোনওদিন ফাটল ধরেনি।
আরও পড়ুনঃ “আজকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত পণ্যে পরিণত হয়েছে, স্বরলিপির ভুলে আবেগও হারিয়ে যাচ্ছে!”, “ফেসবুক-ইউটিউবে গান করছে, কিন্তু সময় নেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের গভীরে যাওয়ার!”— সংগীত চর্চার বদলে যাওয়া ধারা নিয়ে আক্ষেপ শ্রাবণী সেনের!
তবে জীবন আবারও কেঁটে দেয় ভালবাসার সুতোগুলি। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে ২০২২ সালে প্রয়াত হন সোনালী চক্রবর্তী। ফের একা হয়ে পড়েন শঙ্কর। আজও সোনালির কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে তাঁর। অতীতের যন্ত্রণা, অপবাদ আর ভালবাসার বন্ধনে গাঁথা এই অভিনেতার জীবন গল্প যেন সিনেমার থেকেও গভীর।