সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত মুখ তথা অভিনেত্রী ‘সুস্মিতা রায়’ (Susmita Roy) সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যতটা শিরোনামে, ততটাই আলোচনায় এসেছে তাঁর নতুন কর্মজীবনের অধ্যায়ও। কয়েক মাস আগে সাংবাদিক স্বামী ‘সব্যসাচী চক্রবর্তী’র (Sabyasachi Chakraborty) সঙ্গে বিচ্ছেদের (Divorce) ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কাকতালীয়ভাবে সেই খবর সামনে আসে তাঁর জন্মদিনের দিনেই। সেই ঘোষণার পর থেকেই ভক্তরা বিস্মিত ও দুঃখিত হলেও, সুস্মিতা কিন্তু জীবনের গতি থামিয়ে রাখেননি। বরং ব্যক্তিগত অস্থিরতাকে পেছনে ফেলে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছেন নতুন পথের দিকে।
তবে ডিভোর্স নিয়ে প্রকাশ্য ঘোষণার পরও তাঁর ব্যক্তিগত আচরণকে ঘিরে বিতর্ক থামেনি। সিঁথিতে সিঁদুর পরা নিয়েই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তুমুল আলোচনা। কেউ তাঁকে সমালোচনা করেছেন, আবার কেউ বা বিদ্রূপ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছিল— যখন বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, তখনও কেন প্রথা মেনে সিঁদুর পরছেন? এ প্রসঙ্গে সুস্মিতা নিজেই পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন যে আইনি বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর কাছে এ প্রথা মানা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই ব্যাখ্যা দিয়েও সমালোচনার ঝড় থামানো যায়নি। তবু রাখি পূর্ণিমার দিনও সিঁদুর পরে পূজার ভিডিও শেয়ার করেছিলেন।
ব্যক্তিগত ঝড়ের মাঝেও সুস্মিতা মন দিয়েছেন নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজে। ‘মেডোকার্ট’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে খাঁটি দুগ্ধজাত পণ্য সহজে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছিল। এবার সেই পথেই আরও বড় পদক্ষেপ নিলেন অভিনেত্রী। নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘ক্লিয়ারকাট’ চালু করেছেন তিনি, যা মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি মেয়েদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন সুস্মিতা। তাঁর প্রতিশ্রুতি আরও বড়, ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবেন তিনি।
এই বিশাল উদ্যোগের সূচনা উপলক্ষে কলকাতায় আয়োজিত হয় তিন দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সেখানে হাজির ছিলেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়সহ বেশ কিছু পরিচিত মুখ। প্রায় দুই হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে, প্রত্যেককেই দেওয়া হয় সার্টিফিকেট, যাতে ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের সুযোগ বাড়ে। এদিন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুস্মিতা জানালেন, “এই অনুষ্ঠান কলকাতায় সবচেয়ে বড় এবং প্রথম তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালাও। আমি চাই মেয়েরা যেকোনও পরিস্থিতিতে সাবলম্বী হোক, তাছাড়াও মাঝে মাঝে আমার কাছে লোকজন কাজের জন্য যোগাযোগ করেন।
সেই দিক থেকে দেখতে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থান যথেষ্ট কম। আমি চাই আমার এই নতুন স্টার্টআপে যাতে কিছু পরিবার অন্তত আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে। ‘ক্লিয়ারকাট’ মানুষের ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে শুরু করে রাত পর্যন্ত সমস্ত রকম হোম সার্ভিস দেবে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের তাই মেকআপ নিয়েই করলাম, আমি চাই এখান থেকে মেয়েরা শিখে নিজেদের মতো করে কেরিয়ার গড়ে তুলুক। এমনিতেই মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার পর ওয়েবসাইট বানানোর টাকা থাকে না মধ্যবিত্ত মেয়েদের হাতে, আমার সেই দিক থেকেই ইচ্ছা তাদের যদি একটা করে ওয়েবসাইট বানিয়ে দেওয়া যায়।”
আরও পড়ুনঃ “যাঁরা এখনও লড়ছেন তাঁরা মিষ্টির বাক্স হাতে আসে কিন্তু যারা চূড়ান্ত সফলতা পেয়েছে তারা মনে রাখেনি”—২২ হাজারেরও বেশি পর্ব উপহার দিয়ে সফলতার শীর্ষে স্নেহাশিস, তাও রয়েছে আক্ষেপ
সম্পর্ক ভাঙ্গনের পর এই নতুন শুরু কি অপূর্ণতা বোধ করাচ্ছে? উত্তরে সুস্মিতা জানালেন, “কখনও কখনও মন খারাপ হয় ঠিকই, কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। অনেক পরিশ্রম করে এই ব্যবসাটাকে দাঁড় করিয়েছি, আজ আরও একটা নতুন দায়িত্ব কাঁধে চাপলো। আশা করি কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করতে পারব।” সবশেষে ব্যক্তিগত জীবনের শূন্যতা নিয়ে তিনি অকপটে জানিয়েছেন, তিনি থেমে থাকবেন না, বরং কাজের মধ্যেই খুঁজে নেবেন জীবনযাত্রার মানে। একদিকে ব্যক্তিগত অধ্যায়ের ভাঙন, অন্যদিকে স্বপ্নের নতুন সূচনা— এই বৈপরীত্যই আজকের সুস্মিতা রায়কে এক অনন্য চরিত্রে দাঁড় করিয়েছে।