“ও নিজের জীবনটাকে সম্পূর্ণ অগোছালো করে রেখেছিল, যা একেবারেই ভুল পথের দিকে নিয়ে গেছে, প্রচুর ম’দ খেত, নে’শায় ডুবে থাকত, নিজের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখত না” – প্রয়াত অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মুখ খুললেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়!

নয়তার দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় চলচ্চিত্র জগতে ছিলেন ভীষণ জনপ্রিয়। ছিপছিপে চেহারা, নির্ভেজাল চোখ-মুখের প্রকাশ এবং প্রামাণ্য অভিনয় তাকে দর্শকের কাছে বিশেষ করে তুলেছিল। অঞ্জন চৌধুরী ও সুখেন দাসের মতো পরিচালকরা তাকে বহু পরিবারভিত্তিক ছবিতে কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার উত্থান থমকে যায়। বিবাহবিচ্ছেদ, মদের আসক্তি এবং কিছু সময়ে আচরণ নিয়ে সমালোচনা—সব মিলিয়ে তার জীবন যেন ধূসর হয়ে ওঠে।

যৌথ কাজের সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও পরবর্তীতে তার সহ-অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়। শতাব্দী জানালেন, ‘‘আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় যখন সে লোকসভা ভোটে আমার প্রতিপক্ষ হয়। সেই সময় অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে সে অসুস্থ হয়ে আমাকে ফোন করেছিল, এবং তার পর থেকে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করতাম।’’ এই কথায় বোঝা যায় যে, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যা শেষ জীবনের কিছুটা প্রতিফলন ঘটায়।

শতাব্দী আরও জানান, ‘‘জয় নিজের জীবনকে অগোছালো করে রেখেছিল। প্রচুর মদ খেত, নেশায় ডুবে থাকত। নিজের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখত না। এভাবে চলতে চলতে সে নিজেই নিজের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’’ অভিনেত্রীর মতে, জয়ের এই জীবনযাপন তার কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছিল, এবং নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে মানুষ তাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা পেত।

অভিনেতার মৃত্যুর খবর শোনার সময় শতাব্দী অনুভব করলেন গভীর শোক। তিনি জানালেন, ‘‘এত ভালো ছেলে, এত সুন্দর পরিবারে বড় হওয়া একজন মানুষ নিজের জীবনকে এভাবে শেষ করে দিয়েছে। মনে হয়, নিজের ওপর অত্যাচার করায় এ অবস্থা হয়েছে।’’ চিকিৎসকের পরামর্শও শেষ জীবন পর্যন্ত মানেননি জয়, যা শতাব্দীর মতে তার ‘কাল’ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুনঃ “কে এই সাই পল্লবী, যার সঙ্গে আমার তুলনা করা হচ্ছে? চিনি না তাঁকে, যা বলেছি শ্বেতা ভট্টাচার্য হয়েই বলেছি!”– পোশাক বিতর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে আ’গুনে ঘি ঢাললেন শ্বেতা!

শতাব্দীর আবেগময় স্মৃতিতে স্পষ্ট হয় যে, প্রিয় সহকর্মী ও রাজনীতির প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন যেন একরাশ আফসোস ও ভুল পথে চালিত হবার গল্প। বন্ধুত্ব, সম্পর্কের দ্বন্দ্ব, নেশার প্রভাব এবং অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্য দিয়ে জীবন চলে গেছে তার, যা আজ অনেকের মনে গভীর ছাপ রেখেছে।

You cannot copy content of this page