বাংলা টেলিভিশনে, বিশেষ করে ধারাবাহিকে বহু চরিত্র আসে এবং যায়, তবে সব চরিত্র দর্শকের মনে এমন গভীর ছাপ ফেলে যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’-তে (Chiroshokha) প্লুটোর (Partha Bera) মৃ’ত্যু যেন সেই চরিত্রটিকে ব্যতিক্রম করে তুলেছে। প্লুটোর পরিণতি দেখে আপামর দর্শক আবেগে ভেসে গিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে এই ঘটনাকে ঘিরে। বহু মানুষ আজও মানতে পারছেন না যে একটি টেলিভিশনের চরিত্রের মৃ’ত্যুও বাস্তবে এমন বেদনা জাগাতে পারে।
এই দৃশ্য যেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে— কখনও কখনও মৃ’ত্যু জীবিত মানুষকেও আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। পার্থ বেরা, যিনি প্লুটোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, খোলাখুলি স্বীকার করেছেন যে এই সুযোগ তাঁর অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় মোড়, যেটা তাঁকে অভিনেতা হিসেবে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। ছোট থেকে নাটককে ভালোবেসে বড় হওয়া পার্থ কলকাতায় এসে শুরু করেছিলেন সংগ্রামের জীবন। দিন কাটানো ছিল কষ্টকর, অনেক সময় রাত কাটত চোখের জলে ভিজে বালিশ নিয়ে। তবু অভিনয়ের প্রতি গভীর টান তাঁকে হার মানতে দেয়নি।
অচেনা শহর, বন্ধুবান্ধব নেই, পশ্চিম মেদিনীপুরের ছেলেটা জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবেই কাজ শুরু করলেও আজ তিনি দর্শকের কাছে পরিচিত নাম। নিজের ভাষায় তিনি বলছেন, চিরসখা তাঁকে এমন এক চরিত্র উপহার দিয়েছে, যা সারাজীবন তাঁর সঙ্গী হয়ে থাকবে। অভিনেতার মতে, তিনি জানতেন না প্লুটোর গল্প এভাবে শেষ হতে চলেছে। অনেকেই আশা করেছিলেন প্লুটো শেষমেশ ফিরে আসবে, কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে সেটা ঘটেনি। সেই চূড়ান্ত দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় সেটে নেমেছিল নীরবতা।
যখন ক্যামেরা বন্ধ হলো, দেখা গেল ইউনিটের অনেকের চোখেই জল। পার্থ নিজেও আর নিজের আবেগ সামলাতে পারেননি। পরে তিনি জানালেন, বাড়িতে তাঁর মা সেই দৃশ্য দেখার পর ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। পার্থের যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিল না। বাবা-মা চাননি তিনি অভিনয়ে আসুন, কারণ তাঁরা জানতেন এই পেশার লড়াই কতটা কঠিন। তবুও নিজের ভালোবাসার টানে তিনি শহরে চলে আসেন। প্রথম দিকে কোনও কাজ না পেয়ে হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। তবুও হাল ছাড়েননি। অভিনয়ই যে তাঁর স্বপ্ন, সেটি আঁকড়ে ধরে ছিলেন।
‘চিরসখা’-র অডিশনে সুযোগ পাওয়া ছিল তাঁর কাছে যেন এক অলৌকিক ঘটনা। আজ যখন রাস্তায় মানুষ তাঁকে চিনে ফেলেন, প্লুটো বলে ডাকেন, তখন তিনি মনে করেন এই সমস্ত সংগ্রামেরই সঠিক দাম পেয়েছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী এই নবীন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই তিনি নতুন কাজের সুযোগও পাচ্ছেন এখন নিয়মিত। তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো দর্শকের ভালোবাসা আর স্বীকৃতি। পার্থ বলেন, কোনও চরিত্রই তাঁর জীবনে এতটা ছাপ ফেলতে পারেনি। অভিনয়ের প্রথম বড় সাফল্য হিসেবে প্লুটোর স্মৃতি তিনি বুকে ধরে রাখতে চান চিরদিন।
আরও পড়ুনঃ “২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেন কর্পূরের মতো উবে গেল… হাজার চাইলেও আর স্পর্শ করতে পারব না!” “মানুষটা লোকের ভালোর জন্যই বাঁচত, ওকে ছাড়া জীবন কীভাবে এগোবে বুঝতে পারছি না!”— স্বামীর আকস্মিক মৃ’ত্যু নিয়ে ভেঙে পড়লেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান স্ত্রী অঙ্কিতা!
সবশেষে তিনি বলেছেন, লেখিকা লীনা গাঙ্গুলী হলেন তাঁর গড মাদার। ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের জন্য কখনও অডিশনই দেননি তিনি। বরং সেদিন সেটে গেছিলেন অন্য এক কাজে, সেখানেই লীনা তাকে অডিশন দিতে বলেন। প্রথমবারেই চরিত্রটি পেয়ে যায় পার্থ। চরিত্রটির শেষ পর্যায় সববাহী গাড়িতে শুতে হবে, এ কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। অস্বস্তি হয়েছিল বটে, তবে দক্ষ অভিনেতার মত পালন করে গেছেন প্রতিটি দায়িত্ব। সত্যিই, টেলিভিশনের এক কাল্পনিক চরিত্রও যে মানুষের হৃদয়ে এভাবে আবেগ জাগাতে পারে, চিরসখা-র প্লুটো তার অনন্য প্রমাণ।
“আমি এতদিন যা বলেছি ঠিক বলেছি…কোনও আক্ষেপ নেই, আবারও বলব!” “আজকাল কেউ কু’কুরকে “কু’কুর” বললেও লোকে তেড়ে আসে!”— দীর্ঘদিনের বিতর্ক নিয়ে অকপট মমতা শঙ্কর! সমালোচনার জবাবে মুখ খুলতেই ফের জড়ালেন নয়া বিতর্কে!