আজ ‘প্লুটো’ ওরফে পার্থ জিতেছে সবার মন! তবু গ্রামের বলে আজও শুনতে হয় খোঁটা, সহ্য করতে হয় কষ্ট! অপরিচিত শহরে থাকার জায়গাও ছিল না, অপমান আর কটাক্ষ সঙ্গী! কেমন ছিল তাঁর শুরুর যাত্রা? চোখে জল আনবে আপনাদেরও!

স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’-তে (Chiroshokha) ‘প্লুটো’র (Partha Bera) মৃ’ত্যুর ঘটনায় দর্শকদের মধ্যে এক অন্যরকম আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পর্দার চরিত্রটির অকাল পরিণতি যেন বাস্তবেও এক গভীর শূন্যতা রেখে গেছে। বহু দর্শক ইতিমধ্যেই সমাজ মাধ্যমে দাবি তুলেছেন, যেভাবেই হোক গল্পে প্লুটোকে আবার ফিরিয়ে আনা হোক। এ যেন এক কাল্পনিক চরিত্রের জন্য বাস্তব আবেগের ঝড়! দর্শকের ভালোবাসাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এই চরিত্র কতটা মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল।

আর এই ‘প্লুটো’ চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি আলোচনায় চলে এসেছেন নবাগত অভিনেতা ‘পার্থ বেরা’। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাধারণ পরিবারের এই ছেলেটি নিজেও কোনওদিন ভাবেনি যে তাঁর ছোটপর্দায় প্রথম বড় কাজেই এমন সাড়া পড়বে। ২০২১ সালে যখন প্রথম কলকাতায় আসে সে, না তাঁর হাতে ছিল পর্যাপ্ত টাকা, না কাজের কোনও নিশ্চয়তা। এমনকি থাকার জায়গাটুকুও ছিল না। সেদিন যদি এক থিয়েটারের প্রযোজক তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিতেন, তবে হয়তো রাস্তার ধারে বা স্টেশনে রাত কাটাতে হত।

সংগ্রামের সেই শুরুটা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে তাঁর, যদিও এখন সে চেষ্টা করে অতীতের কষ্টগুলো ভুলে যেতে। খুবই মধ্যবিত্ত ঘরে জন্মানো পার্থর ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল অভিনয় করা। কিন্তু মেদিনীপুর থেকে এসে টালিগঞ্জে কাজ পাওয়া এতটাও সহজ ছিল না। আগে পরিবারকেও বোঝাতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে। বাবা ব্যবসা করেন, মা আর বোন সংসার সামলান। অভিনয়ের মতো অনিশ্চিত পেশা তাঁদের প্রথমে ভালো লাগেনি। কিন্তু পার্থর জেদ আর ভালোবাসাই শেষ পর্যন্ত তাঁকে টালিগঞ্জে পৌঁছে দেয়।

স্নাতক হওয়ার পর সে ঠিক করে, জীবনটা অভিনয়কেই উৎসর্গ করবে। তবে সেই পথটা ছিল কাঁটায় ভরা। মেদিনীপুর থেকে আসার কারণে অনেক সময় তাঁকে তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। সেটে কেউ কেউ সরাসরি কটাক্ষ করত। “গ্রাম থেকে এসেছে” বলে তাঁকে আক্রমণ করত অনেকে। অচেনা শহরে টিকে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গে এই মানসিক আঘাতও সামলাতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু পার্থ আজ এসব পুরনো কষ্ট মনে রাখতে চায় না। তাঁর কথায়, “যা হয়েছে, সবকিছুরই হয়তো প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুনঃ খু’নের অভিযোগে বিপাকে মিঠি-কমলিনী, রক্ষা করতে এগিয়ে এল স্বতন্ত্র! প্লুটোর লেখা চিঠি ঘিরে পুলিশের অবস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে! ভালোবাসার বোঝা, নাকি মানসিক ইন্ধন? প্লুটো মৃ’ত্যুর রহস্যে উত্তপ্ত ‘চিরসখা’!

না হলে আজকের আমি হতাম না।” এখন তাঁর চোখ শুধু সামনে। প্লুটো শেষ হয়ে গেলেও পার্থর বিশ্বাস, নতুন সুযোগ আসবেই। চরিত্রটা তাঁকে যে ভালোবাসা এনে দিয়েছে, সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দর্শকদের আবেগ তাঁকে শক্তি যোগাচ্ছে। যেখানে তাঁর অভিনীত একটি চরিত্র মানুষকে এতটা নাড়া দিতে পারে, সেখানে তিনি জানেন যে ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু সম্ভব। পার্থর আলোয় উঠে আসার এই পথচলাতেই লুকিয়ে আছে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর এক তরুণ অভিনেতার দৃঢ় স্বপ্ন।

You cannot copy content of this page