“কন্যাদান হয়ে গেছে, স্বামীর সম্পত্তির ভাগ নেব, তার পরও কেন বাবাকে জল দেব?”— পূর্বপুরুষের তর্পণ মানেন না সুদীপা! মহালয়া ঘিরে মন্তব্যে বিতর্ক উস্কে দিলেন অভিনেত্রী!

মহালয়ার (Mahalaya) ভোরে বাংলার প্রতিটি পরিবার জুড়ে তর্পণের রীতি আজও বহমান। এক সময় এই দায়িত্ব শুধু পরিবারের পুরুষদের কাঁধেই ছিল, কিন্তু এখন সমাজ বদলেছে। অনেক নারীও পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে জল দেন। তবে এই বিশ্বাস ও চর্চার বাইরে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন, বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ‘সুদীপা চট্টোপাধ্যায়’ (Sudipa Chatterjee)। তিনি মনে করেন, গোত্রান্তর হয়ে গেলে কন্যাদের তর্পণে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়।

সুদীপার যুক্তি হলো, হিন্দু বিবাহের পর কন্যাদানের মাধ্যমে মেয়ের নতুন গোত্রে প্রবেশ ঘটে। সেই কারণে জন্মসূত্রে পাওয়া গোত্রে পূর্বপুরুষের তর্পণ করা আর যুক্তিসঙ্গত নয়। তাঁর ভাষায়, “আমি কখনও তর্পণ করি না। আমার দাদারা করেন, আর এটা তাঁদেরই দায়িত্ব। যদিও আমি এই প্রথা মানি না।” তাঁর এই বক্তব্য নানান আলোচনার জন্ম দিলেও তিনি এটিকে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই তুলে ধরেছেন বলে দাবি।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন পুরাণে উল্লিখিত ‘পুতলোক’-এর প্রসঙ্গ। সুদিপার কথায়, বাঙালির বিশ্বাস অনুযায়ী মৃ’ত্যুর পর আত্মার নানান স্তরের মধ্যে এই স্থানটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সন্তানদের তর্পণ এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হলো মৃ’তদের আত্মাকে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া। এখান থেকেই এসেছে ‘পুত্রাং দেহি’ মন্ত্রের উৎপত্তি। কিন্তু আধুনিকতার যুগে অনেকেই এই মন্ত্র বদলে ফেলতে চাইছেন। একে সুদীপা বলেন, অর্ধশিক্ষার ফল।

তাঁর কথায়, “বিয়ের পর বাবার সম্পত্তি নিয়ে পড়ে থাকবো, সেটা হয় না। বিয়ে যখন হয়েছে স্বামীর সম্পত্তিতেও ভাগ নিতে হবে!” তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাঁর এই ধারণার অর্থ এই নয় যে, যারা নারী হয়ে মুখাগ্নি বা পিণ্ডদান করেন, তাঁদের ছোট করা হচ্ছে। তিনি কেবল নিজের বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেছেন। অন্যদের মত এবং আচার তিনি সম্মান করেন। তাই তাঁর বক্তব্যকে যেন ভুলভাবে না নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ “তুমি আমাকে মেয়ে হিসেবে বরণ করেছিলে!”— নিজের মা নয়, শাশুড়িকে হারানোর কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অহনা! “নিজের জীবত মাকে ভুলে গেছেন?” “শাশুড়ি মা হয় না কোনদিনও, বেশি আদিখ্যেতা!”— অভিনেত্রীকে কটাক্ষ নেটিজেনদের!

এতকিছুর পরও সুদীপা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি চান না সমাজ তাঁর মতামতকে সর্বজনীন সত্যি ভেবে নিক। তিনি একান্তই নিজের দৃষ্টিকোণ তুলে ধরছেন। মহালয়ার মতো আবেগঘন দিনে এই বিতর্কিত অবস্থান নতুন করে আলোড়ন তুললেও, শেষ পর্যন্ত তিনি জোর দিয়েছেন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপরেই।