জি বাংলার ‘তুই আমার হিরো’ (Tui Amar Hero) ধারাবাহিক নিয়ে শুরু থেকেই ছোটখাটো বিতর্ক লেগেই আছে। এবার যেন একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল! সম্প্রতি ধারাবাহিকে ‘সায়ক চক্রবর্তী’র (Sayak Chakraborty) চরিত্রে সম’কামী সম্পর্কের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে এখন জোর বিতর্ক চলছে দর্শকমহলে। একদিকে একাংশ বাংলা টেলিভিশনে নতুন ভাবনার সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে অনেকেই একে পারিবারিক বিনোদনের জায়গায় অপ্রাসঙ্গিক এবং অস্বস্তিকর মনে করছেন।
বিশেষ করে যখন একটি ছেলে, মেয়েকে বিয়ে করার পর গোপনে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে- এই ঘটনাটিকে কেউ কেউ ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’ বলেও মনে করছেন। এমন নয় যে, টেলিভিশনে এর আগে কখনও সমকামী চরিত্র দেখানো হয়নি। তবে মেইনস্ট্রিম চ্যানেলে, বিশেষ করে প্রাইম টাইম ধারাবাহিক— যেখানে পরিবারের সকলে একসাথে বসে দেখেন, সেখানে এই বিষয়টি তুলে ধরা এখনও অনেকের কাছে ‘অচেনা’ বা ‘অসুবিধাজনক’। প্রশ্নটা তাই শুধু ‘কেন দেখানো হচ্ছে’ না, বরং ‘এমন করেই কি দেখানো উচিৎ’ তা নিয়েই।
এমনকি, ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভাবাচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে- তারা এই সম্পর্কের অর্থ কতটা বুঝবে, তাদের মানসিক বিকাশে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এ-ও ঠিক যে, সমাজে বাস্তবেই সম’কামী মানুষ আছেন এবং তাদের জীবনও গল্পের অংশ হওয়া উচিত। টেলিভিশন বা যেকোনও গণমাধ্যম সমাজের প্রতিচ্ছবি-এই যুক্তিতে কেউ কেউ বলছেন, যে বিষয়গুলো এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল, তা সামনে এলেই অস্বস্তি তৈরি হয়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে বিষয়গুলো অনুপযুক্ত।
বরং ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এসব বিষয় স্বাভাবিকভাবে নিতে শেখে।যদিও অনেকে বলছেন, ‘সায়ক বাস্তব জীবনেও সম’কামী তাই সিরিয়ালে সে একই রকম চরিত্রে অভিনয় করছে’, কিন্তু এটিকে ব্যক্তি আক্রমণ হিসেবে না দেখে, একজন অভিনেতা হিসেবে চরিত্রে অভিনয় করার দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে হবে। অভিনেতার কাজ হলো বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। তার ব্যক্তিগত জীবন এখানে মুখ্য নয়। সমস্যাটা যদি চরিত্রের মধ্যে থাকে, তবে তা আলোচনা হওয়া দরকার।
আরও পড়ুনঃ বলিউড-টলিউডে একসঙ্গে বাজিমাত! ৩২ বছর পর ‘রক্তবীজ ২’তে শিবপ্রসাদের সঙ্গে ফের কাজ, পুজোয় বড়পর্দায় ফিরছেন সীমা বিশ্বাস! অভিনয় করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার চরিত্রে!
কিন্তু অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন টেনে আনা খুব একটা গ্রহণযোগ্য কাজ নয়। এমন সংবেদনশীল বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস করে ধারাবাহিকে দেখানো মানেই সমাজের পরিবর্তনের চিহ্ন। কিন্তু তার উপস্থাপন যেন যথাযথ হয়, সচেতনতার সঙ্গে হয়, এই প্রত্যাশাও যুক্তিসম্মত। সমাজের নানা স্তরের মানুষের ভাবনা ও মানসিকতা একরকম নয়-তাই এমন সংবেদনশীল বিষয় তুলে ধরার সময় নির্মাতাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। পরিবর্তন হোক, তবে সেই পরিবর্তন যেন যুক্তিসঙ্গত হয় এবং সবার সঙ্গে কথোপকথনের জায়গা তৈরি করে।