সিঙ্গাপুরে জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় দিন যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে রহস্য। প্রথমে বলা হয়েছিল, স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কিন্তু এখন সামনে এসেছে এক বিস্ফোরক দাবি। গায়কেরই ব্যান্ডসদস্য শেখরজ্যোতি গোস্বামী পুলিশের জেরায় জানিয়েছেন, জুবিনের মৃত্যু কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং তাঁকে বিষ খাইয়ে খুন করা হয়েছে।
শেখরজ্যোতি আরও জানিয়েছেন, জুবিন সাঁতারে দক্ষ ছিলেন, তাই ডুবে মারা যাওয়া সম্ভব নয়। তাঁর অভিযোগ, গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা-ই নাকি এই খুনের নেপথ্যে। শেখরের কথায়, “জুবিন জলে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বাসকষ্টে কষ্ট পেতে থাকেন। তখন সিদ্ধার্থ চেঁচিয়ে বলে, ‘জাবো দে, জাবো দে’— অর্থাৎ ওকে যেতে দাও।” আরও চাঞ্চল্যকরভাবে তিনি দাবি করেছেন, সিদ্ধার্থই নাকি জুবিনকে বিষ দেয় এবং ঘটনাটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানোর জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি, সেইদিনের সব ভিডিয়ো যেন কেউ শেয়ার না করে, সে নির্দেশও নাকি দিয়েছিল ম্যানেজার।
ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পর সিঙ্গাপুর সরকার জুবিনের স্ত্রী গরিমার হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে দিয়েছে। যদিও অসম সরকারের করা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এই সময়েই শেখরজ্যোতির এমন দাবি নতুন করে আগুন জ্বালিয়েছে তদন্তে। ইতিমধ্যে জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, উৎসবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত এবং দুই ব্যান্ডসদস্য শেখরজ্যোতি ও অমৃতপ্রভা মোহন্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চারজনকেই ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখরের জবানবন্দি তদন্তের মূল মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সিআইডির নয় সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) সিঙ্গাপুরে গিয়ে ঘটনার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি, অসম সরকার বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়া। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, “যদি পরিবারের কাছে কোনও দিক অস্বাভাবিক মনে হয়, তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।”
এদিকে, শেখরজ্যোতি আরও জানিয়েছেন, ঘটনার সময় জুবিনের মুখ ও নাক থেকে ফেনা বেরোচ্ছিল, অথচ ম্যানেজার বলেছিলেন, “এটা অ্যাসিডের প্রতিক্রিয়া, চিন্তার কিছু নেই।” ঘটনাস্থলে নাকি ইয়টে ওঠার পর শর্মা জোর করে বোটের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যার ফলে মাঝসমুদ্রে সেটি দুলতে শুরু করে এবং সবাই আতঙ্কে পড়ে। যদিও সিদ্ধার্থ শর্মা ও শ্যামকানু মহন্ত এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুনঃ “সুপারস্টার বলার জায়গায় দেব এখনও পৌঁছায়নি!” “বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াবে বলে, সব সুবিধা একাই নিচ্ছে!”— কুণালের পর দেবকে কটাক্ষ ব্রাত্য বসুর! এবার ‘রঘু ডাকাত’ বিতর্কে শাসক দলের মুখপাত্রের পাশে দাঁড়িয়ে বি’স্ফোরক শিক্ষা মন্ত্রীও!
অসমজুড়ে এখনও শোকের আবহ। প্রিয় শিল্পীর মৃত্যু মানতে পারছেন না ভক্তরা। জুবিনের স্ত্রী গরিমা আগেই বলেছিলেন, স্বামীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এখন তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য প্রকাশ্যে আসায় সেই সন্দেহ আরও গভীর হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, একজন ক্লান্ত ও অসুস্থ মানুষকে কেন জোর করে ডাইভিংয়ে পাঠানো হল? আর কেনই বা সেইদিন তাঁকে যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই এখন খুঁজছে গোটা দেশ।