বিয়ের পর জীবনের গতি অনেকের কাছেই বদলে যায়, বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে। অনেকেই মনে করেন, সংসার মানেই নিজের স্বপ্নের ইতি। কিন্তু টলিউডের দাপুটে অভিনেত্রী ‘অঞ্জনা বসু’ (Anjana Basu) সেই ধারণাকে নিজের জীবন দিয়েই ভুল প্রমাণ করেছেন। বিয়ের পরও তিনি নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন, শুধুমাএ পরিশ্রম আর মেধার জোরে। তিনি জানেন, দায়িত্ব আর ভালোবাসা— দুই-ই একসঙ্গে সামলানো যায়, যদি ইচ্ছে থাকে।
প্রসঙ্গত, অঞ্জনা পড়াশোনা করেছিলেন মনোবিদ্যা নিয়ে। রাজা বাজার সায়েন্স কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ই বিয়ে হয় তাঁর, স্বামী সুমন্ত্র বসুর সঙ্গে। বিয়ের পর সংসারের দায়ভার সামলাতে গিয়ে পড়াশোনায় বিরতি টানেন তিনি। পাটনায় গিয়ে গড়ে তোলেন নতুন জীবন, সেখানে জন্ম নেয় তাঁদের একমাত্র সন্তান অরিত্র বসু। প্রথম জীবনে তিনি দক্ষ ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী ছিলেন। বাবা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলেও কখনওই চাননি মেয়ে অভিনয় জগতে আসুক।
তবে, বিয়ের পর সংসার সামলানোর মাঝেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর আজ তাঁকে কে না চেনে! ছোটপর্দায় দৃঢ় চরিত্রে, বিশেষ করে গৃহকর্ত্রী হিসেবে তাঁর জন্য জুরি মেলা ভার। স্বামী কাজের সূত্রে দিল্লিতে থাকেন, কখনও আবার বিদেশেও। কলকাতায় একাই থাকেন অঞ্জনা। তাঁর মতে, জীবনে স্ট্রাগল শেষ হয় না, শুধু রূপ বদলায়। একবার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কখনও কি এই বিয়েটা ভেঙে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করেনি?
তিনি উত্তর দেন, “বিয়েটা ভেঙে দিলেই কী আমি একেবারে একটা বিরাট রাজার আসন পেয়ে যাবো? নাকি কেউ রাজার আসন সাজিয়ে বলবে, তুমি বিয়েটা ভেঙে দিলেই ওই আসন তোমার। না তো! ধরো যদি আমি আজকে প্রচণ্ড স্ট্রাগল করে আর পারছি না, বিয়েটা ভেঙেই দিলাম। পরেরদিন থেকে কি কেউ গোলাপ ছড়িয়ে দেবে রাস্তায়, আমার হাঁটার জন্য?” তাঁর এই কথায় ফুটে উঠেছে জীবনের প্রতি এক বাস্তব, দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি। নিজের সাফল্যের পেছনে পরিবারকেই কৃতিত্ব দেন অঞ্জনা।
আরও পড়ুনঃ একটুও দেরি হলেই হতে পারত মৃ’ত্যু! মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবস্থার অবনতি, আইসিইউতে ভর্তি জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী! প্রা’ণঘাতী সংক্রমণে লিভার খারাপ, বিলিরুবিন আকাশছোঁয়া!
স্বামী-সন্তান তাঁর জীবনের অঙ্গ, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি কাউকে আড়ালে রাখেন না। অঞ্জনার ভাষায়, “কোনোদিনই স্বামীকে লুকিয়ে কিছু করিনি আমি। কাছের মানুষদের ঠিক যতটা সম্মান প্রাপ্য, সম্পূর্ণভাবে চেষ্টা করি।” আজ তাঁর ছেলে অরিত্র পড়াশোনা করছে বিদেশে। কিন্তু দেশে ফিরলে মা-বাবার সঙ্গে দেখা যায় নানা অনুষ্ঠানে। অঞ্জনা আজ টলিউডের এক উজ্জ্বল নাম, তবে তাঁর জীবনযাত্রা একটাই বার্তা দেয়— বিয়ে বা মাতৃত্ব কোনও বাধা নয়, বরং এগিয়ে চলার প্রেরণা হতে পারে।