বাংলা বিনোদন জগতে এমন অনেক মুখ আছেন, যাঁরা নিজের কাজ দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন, তবে লাইমলাইটে আসা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তাঁদের মধ্যেই একজন, ‘সব্যসাচী চৌধুরী’ (Sabyasachi Chowdhury)। প্রচারের আলো থেকে দূরে থেকে, নিঃশব্দে কাজ করে যাওয়াই তাঁর অভ্যেস। তিনি এমন একজন অভিনেতা, যাঁর অভিনয় দেখলে মনে হয় চরিত্রটি যেন বাস্তব থেকে উঠে এসেছে। বিশেষ করে আধ্যাত্মিক চরিত্রে তাঁর অভিনয় এতটাই জীবন্ত যে দর্শকের চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন সেই চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
স্টার জলসার ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এর ‘বামাক্ষ্যাপা’ চরিত্রে তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তাই প্রমাণ, তিনি ঠিক কোন জায়গায় দর্শকের মনে স্থান করে নিয়েছেন। সেই চেহারা আজও তিনি বজায় রেখেছেন, কারণ খুব শীঘ্রই বড় পর্দায় ফিরছেন ‘বামাক্ষ্যাপা’ চরিত্রে। ছোট পরিসরের গল্প বলার জায়গা থেকে আজ তিনি শুধু অভিনেতা নন, স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জনপ্রিয়তা বা স্টারডমের পেছনে ছোটেন না, বরং প্রতিটি চরিত্রের গভীরে পৌঁছানোই তাঁর আসল লক্ষ্য।
নিজের মতো করে চলা, প্রচার না করে কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করা— এই নীতিতেই বিশ্বাস করেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও তাঁর মনে প্রশ্ন থেকে গেছে। সম্প্রতি তিনি অকপটে ভাগ করে নিয়েছেন সেই কথা। একটি সিদ্ধান্ত, যা তাঁকে বহুবার ভাবিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমার মা আমায় চিরকাল বলতেন যে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দে। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার খবর এনে দিতেন আমাকে। আমি বরাবরই খুব সোজা-শক্ত শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থেকেছি।
মকে বলেছি যে আমি করবো না, ক্রিয়েটিভ তাই করতে চাই। এটাই আমার পেশা বানাতে চাই। তবে দুই একবার যখন কঠিন সময় এসেছে, মনে হয়েছে মা ঠিকই বলেছিল। ইচ্ছা করত মাকে গিয়ে বলি, ভাগ্যিস বলিনি! তাই আজও এই পেশায় আছি।” সব্যসাচী নিজেকে কখনোই ‘সাধারণ’ সাফল্যের মানদণ্ডে মাপেননি। তাঁর কাছে পেশা মানে আত্মা দিয়ে করা কিছু— যেখানে মনের কথা, সৃষ্টিশীলতা, এবং নিষ্ঠা মিশে থাকে। তবে জীবন তো শুধু পেশা নয়, পারিপার্শ্বিক চাপ, পরিবারের প্রত্যাশা— সব কিছুই মিলে একজন মানুষ তৈরি হয়।
আরও পড়ুনঃ চাঁদ দেখে করবা চৌথ! “বাঙালিদের কি পুজো কম পড়েছে যে এখন করবা চৌথ করতে হবে?” “অবাঙালিরা ইতু পুজো, নীল ষষ্ঠী করছে?” — বাঙালি হয়েও অবাঙালি ব্রত পালনে বিতর্কে সুদীপা চ্যাটার্জি, উত্তাল নেটপাড়া! প্রশ্ন উঠছে, ট্রেন্ডে গা ভাসাতে ‘বাঙালিয়ানা’ হারাচ্ছে কেন?
ঠিক সেই জায়গা থেকেই উঠে আসে বাস্তবের টানাপোড়েন। আর সেই টানাপোড়েনে কখনও নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, শেষমেশ নিজের বেছে নেওয়া পথেই বিশ্বাস রাখেন তিনি। সব্যসাচীর কথায়, ভালোবাসার পেশা বেছে নেওয়ার সাহস যেমন থাকা উচিত, তেমনি সেই পেশার সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার মানসিকতাও থাকতে হয়। যে যুগে প্রচারই সবকিছু, সেখানে একজন শিল্পী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন নীরবে, নিশ্চিন্তে, নিজের মতো করে।