“এটা তো পিকু ফ্রম মিশো!” “নকল করেও কোনও প্রোগ্রেস নেই রুক্মিণীর অভিনয়ে!”— বিতর্কে চিরঞ্জিৎ-রুক্মিণীর নতুন ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’! দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখে বাবা-মেয়ের ‘টম অ্যান্ড জেরি’ সম্পর্ক!

বাংলা বিনোদনে এমন কিছু কাজ উঠে আসে যা দর্শকদের একাংশের মনে আগ্রহ জাগায়, আবার অন্য অংশকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে— এই গল্পটা আমরা আগে কোথাও দেখিনি তো? পরিচালক ‘অর্ণব মিদ্যা’র আসন্ন ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ (Haati Haati Paa Paa) নিয়েও এখন ঠিক এমন দ্বৈত প্রতিক্রিয়া ঘুরছে দর্শক মহলে। ‘রুক্মিণী মৈত্র’ (Rukmini Maitra) এবং ‘চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী’র (Chiranjeet Chakraborty) এই প্রথমবার একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা, তাও আবার বাবা-মেয়ের ভূমিকায়। টিজারে দেখা যাচ্ছে এক আদুরে মিষ্টি সম্পর্ক, যেখানে বাবার জেদ আর মেয়ের ধৈর্যের মাঝেই তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত রসায়ন।

অনেকেই বলছেন, ছবি একেবারে গল্প পরিচিত, সাদামাটা, আর তাই হয়ত আরও কাছের। তবে এই ঘরোয়া আবহই যেন এখন সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে! সমাজ মাধ্যমে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে যে এই ছবিটি নাকি “পিকু”র (Piku) বাংলা সংস্করণ! অমিতাভ বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত সুপারহিট সিনেমা পিকু-র ছায়া নাকি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-তে। কেউ কটাক্ষ করে লিখেছেন, “এটা তো পিকু ফ্রম মিশো!” আর একজন লিখেছেন, “খালি নকল আর নকল, তাও পিকুর? অদ্ভুত!”

অনেকের মতে, ছবির আবেগ, কাঠামো এমনকি চরিত্রগুলোর মেজাজও সেই ছবির সঙ্গে অত্যন্ত মিল রাখে, অথচ মানের দিক থেকে সেটা নাকি অনেকটাই দুর্বল। দীপিকার অভিনয়ের সাথে তুলনা করতে না চাইলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, “নকল করেও কোনও প্রোগ্রেস নেই রুক্মিণীর অভিনয়ে! সবকিছু সবার জন্য নয়, রুক্মিণী অভিনেত্রী হিসেবে শূন্য।” তবে এইসব কড়া সমালোচনার মধ্যেও কিছুটা ইতিবাচকতার বার্তা দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বারবার ‘নকল’ বলে বাতিল করা যথাযথ নয়।

এমন হলে বাংলার নিজস্ব সিনে-পরিচিতিটাই সংকটে পড়ে যাবে। একজন লিখেছেন, “যারা পিকুর বাংলা ভার্শন বলে চেঁচাচ্ছে তাদের বলছি, আচ্ছা আপনারা কি কখনও কোনও সাউথের মুভি হিন্দিতে নকল দেখেননি?” তিনি আরও যোগ করেন, “সেই বেলাতে তো আপনাদের খুব মনে ধরেছিল… তাহলে এখন যদি এটা পিকুর নকল হয়েও থাকে, সেটা অ্যাকসেপ্ট করতে আপনাদের কোথায় জ্বালাপোড়া দিচ্ছে বাংলা বলে?” এই প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট যে দর্শকরা কেবল গল্প নয়, তার উপস্থাপনা ও প্রাসঙ্গিকতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, আসলে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে গল্প বলাটা কোনও নতুন বিষয় নয়, তবে প্রতিটি পরিবারে এই সম্পর্কের ধরণ আলাদা। এই ছবির টিজারে বাবা-মেয়ের খুনসুটি, মায়ের অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হওয়া শূন্যতা এবং বয়সজনিত পরিবর্তনের ফলে বাবার মনোভাবের রূপান্তর– সব মিলিয়ে যেন এক সহজ অথচ অনুভবযোগ্য ছবি আঁকা হয়েছে। ছবির দৃশ্যগুলো দেখে মনে হয়, আমাদের আশেপাশের কোনও বাড়ির গল্প দেখছি। যেখানে অগোছালো অথচ আন্তরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলতেই থাকে।

আরও পড়ুনঃ “পশ্চিমবঙ্গ অরাজনৈতিক রাজ্য ও সাংস্কৃতিক উদারতায় বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছে”— দেশে ফিরেই ইউনিটি কনসার্ট থেকে বহিষ্কৃত অনির্বাণদের ‘হুলিগানইজম’! সমাজ মাধ্যমে ক্ষোভ অনুরাগীদের, রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ কি থাকল তবুও?

তবে দিন শেষে প্রশ্নটা থেকেই যায়, এই গল্পটা কি মৌলিক? নাকি শুধুই আরেকটা সফল ছবির ছায়ায় দাঁড় করানো প্রয়াস? নকল আর মৌলিকত্বের এই দোলাচলে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে ছবির মানবিক দিকগুলো। হয়তো সময়ই বলে দেবে, ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ কেবল বিতর্কের কেন্দ্রে থাকল, না সত্যি সত্যি দর্শকের মনে জায়গা করে নিল। তবে যেটাই হোক না কেন, বাংলা সিনেমাকে নিয়ে এত আলোচনা অন্তত এটুকু বুঝিয়ে দেয়– মানুষ এখন গল্প চায়, কিন্তু সেটা যেন নিজস্ব হয়, নিজের ভাষায়, নিজের চোখ দিয়ে দেখা।