বাঙালি বাড়িতে পুজো মানেই একগাদা নিয়মকানুন আর বিশ্বাসের বেড়াজাল। বিশেষ করে ঘরের বড়দের কাছ থেকে শোনা যায় যে পুজোয় এই করা যাবে না, সেটা বললে মন্দ হবে। যেমন– লক্ষ্মী পুজোতে ঘণ্টা বাজানো যাবে না, তাতে মা রুষ্ট হবেন। আবার কোনও রকম আমিষ খাবার খাওয়া বা রান্না করা যাবে না কোনও পুজোর দিন, উপোস থাকতে হবে পুজো করতে গেলে। এইসব নিয়মের বাইরে গেলেই নাকি দেব দেবীরা পাপ দেবেন, জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার!
এমনটাই বিশ্বাস চলে আসছে, যদিও এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে এসব বিশ্বাস অনেকেই প্রশ্ন করেন কিন্তু ঠিক একইভাবে অনেক শিক্ষিত মানুষও এসব নিয়ম-কানুনকে আঁকড়ে ধরে থাকেন। তবে এর মধ্যেই কেউ কেউ আছেন, যারা গতে বাঁধা পথে হাঁটেন না। যেমন অভিনেত্রী মানসী সেনগুপ্ত। বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ, যিনি ইতিবাচকের থেকে নেতিবাচক চরিত্রেই বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি দ্বিতীয়বার মা হওয়ার পরেও তিনি ফিরেছেন শুটিংয়ে, অভিনয় করছেন ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’ ধারাবাহিকে।
তার জীবনের মতোই তার বিশ্বাসগুলোও বেশ সোজাসাপ্টা ও বাস্তবধর্মী। কালীপুজোর মতো এত শক্তিময়ী দেবীর আরাধনাকেও তিনি দেখেন খুব সহজভাবে-মা হিসেবেই। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মা কালী শ্মশানবাসিনী বলে আগে ঘরে পুজো হত না। আজও অনেকেই মনে করেন, ঠিকঠাক নিয়ম না মানলে তিনি নাকি ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেন। কিন্তু মানসীর ভাবনা একদম আলাদা। তিনি বলেন, “অনেকেই বলেন এই কথাটা, এমনকি আমার মাও বলেন যে, মা কালী কিন্তু ছেলেখেলা নয়।
এদিক ওদিক হলে নাকি অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে! কিন্তু আমি এসব বিশ্বাস করি না। আমারও একটি মেয়ে রয়েছে, আমিও মা। কুসন্তান হলেও কুমাতা হয়, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি কালী ঠাকুরকে মা রূপে পুজো করছি, বাড়ির সদস্যের মতো। নিয়ম-কানুনে বেঁধে কেন তাকে আলাদা করে রাখব? আমার বাড়িতে উপোস করে পুজো দেওয়ার নিয়ম নেই, খেয়েও মকে পুজো দেওয়া যায়, মকে ইচ্ছে মতো আদর করা যায়। কোনও দোষ করলে মা শাস্তি দেবে, কিন্তু নিয়ম না মানলে পাপ দেবে- এটা বাজে কথা!”
আরও পড়ুনঃ বাংলায় মায়ের খড়্গ এক জনার হাতেই মানায়, আর তিনি হলেন আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কালীপুজোয় মা কালীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর তুলনা টানলেন রচনা ব্যানার্জি
মানসীর কথায় স্পষ্ট যে ভক্তি মানেই ভয় নয়, বরং সম্পর্কের মতো ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখাও একধরনের আরাধনা। এই ভাবনাগুলো আসলে সময়ের দাবি। অনেক পরিবারে এখনও শিশুরা জানতে পারে না কেন পুজোর দিন মাংস খাওয়া যাবে না, বা কেন ঘণ্টা বাজালে মা রাগ করবেন! অথচ এগুলোর পেছনে যুক্তির চেয়ে বিশ্বাসই বড় হয়ে দাঁড়ায়। মানসীর মতো মানুষেরা সেই বিশ্বাসের গায়ে যুক্তির আলো ফেলছেন, সেখানেই এই সময়ের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। পুজো হয়ে উঠছে আরো মানবিক, আরো আপন।






“আগে মা-বাবারা গল্প পড়ে শোনাতেন, এখন বাচ্চারা বিরক্ত করলেই মোবাইল ধরিয়ে দেয়!” “বাচ্চারা চুপ করলেও জ্ঞানের বিকাশ কি হয়?”— বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের সংবেদনশীলতা নিয়ে খোঁচা শ্রীকান্ত আচার্যের! প্রজন্মের বদলে যাওয়া শিক্ষার ধরণেও কি খেদ পড়ছে?