“সবার মা-বাবা হওয়া উচিত নয়, যোগ্যতা লাগে!” “সন্তান মা-বাবার দায়িত্ব, শুধু শারীরিক মিলন হয়েছে বলেই জন্ম দিলে হয় না, দায়িত্ব নিতে হয়!”— নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অকপট রিনি বিশ্বাস!

বাংলা টেলিভিশনের দীর্ঘদিনের এক পরিচিত মুখ ‘রিনি বিশ্বাস’ (Rini Biswas), যাকে বহু দর্শক চেনেন তার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা, সাবলীল অভিনয় আর নিখুঁত আবৃত্তির জন্য। সতেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ছোটপর্দায় এক অনন্য উপস্থিতি তৈরি করেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তার শিল্পীসত্তার প্রকাশ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিশেষ করে জনপ্রিয় সব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন ঘরোয়া নাম। তবে রিনি শুধু পর্দার মানুষ নন, তিনি লেখালেখির জগতেও সমান স্বচ্ছন্দ।

বিভিন্ন পত্রিকা থেকে শুরু করে ম্যাগাজিনেও নিয়মিত লেখেন তিনি, আর তার বিষয়বস্তু অনেক সময় নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে। বিশেষ করে মাতৃত্ব, সংসার, আর কর্মজীবনের ভারসাম্য নিয়ে তার ভাবনা পাঠকদের গভীরভাবে স্পর্শ করে। তার লেখায় এক ধরনের সততা আছে— যেখানে একদিকে কর্মজীবী নারীর সংগ্রাম, অন্যদিকে মায়ের কোমল ভালোবাসা একে অপরকে ছুঁয়ে যায়। এসব লেখার মাধ্যমেই তিনি বোঝাতে চান, বাহ্যিক সাফল্যের আড়ালেও একজন নারীর ভেতরে কত রকম টানাপোড়েন, দ্বিধা আর দায়িত্ব একসাথে লড়াই করে।

রিনির জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল যখন সন্তান পাবলো জন্ম নেয়ার কিছুদিন পর তাকে কর্মসূত্রে বিদেশ যেতে হয়। দেড় বছরের জন্য বুদাপেস্টে থাকার কথা থাকলেও মাত্র তিন মাস পরেই তিনি ফিরে আসেন। সম্প্রতি সেই সব অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করতে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সন্তান মা-বাবার সিদ্ধান্ত, তাঁর তো নিজের কোনও হাত নেই এখানে। যতক্ষণ না সেই সন্তান বড় হচ্ছে, মা-বাবার একটা দায়িত্ব কিন্তু থেকেই যায়। বিশেষ করে মায়ের দায়িত্বটা বড়, কারণ মা সেই সন্তানকে একেবারে ভ্রুণ অবস্থা থেকে লালন করছে।

তাই একজন মা হয়ে, আমার খালি মনে হয় যে আমার দায়িত্বটা অনেকটা। আমি তাঁকে যখন পৃথিবীতে আনলাম, সেটা নিজের দায়িত্বে আনলাম। এবার আমি তাঁকে মাঝ রাস্তায় ফেলেও দিতে পারব না, বা একাও থাকতে পারবো না। আমার ছেলে যখন ছোট, সব সময় মনে হতো যে, ওকে অনেকটা সময় দেওয়া দরকার। সেই জন্য ও যেই সময়টুকু ব্যস্ত থাকত, বিশেষত স্কুলে থাকত– আমি সেই সময়টুকুই কাজ করেছি।” তিনি এই প্রসঙ্গেই আরও যোগ করলেন, “আসলে অভিভাবক হওয়াটাও না শিখতে হয়।

আরও পড়ুনঃ “আগে বিচিত্রানুষ্ঠান ছিল বাঙালির সংস্কৃতির অংশ, আজ বাঙালি নিজের সেই সংস্কৃতিকেই ভুলতে বসেছে!” “সারা বছর জুড়ে লেগে থাকত অনুষ্ঠান, এখন আর প্রায় দেখাই যায় না!”— বর্তমান প্রজন্মের সাংস্কৃতিক দূরত্ব নিয়ে খেদ প্রকাশ সঙ্গীতশিল্পী জোজোর!

শুধুমাত্র শারীরিক মিলন এবং সন্তান এলো, সুতরাং মা-বাবা হয়ে গেলাম– বিষয়টা এতটাও সহজ না! আমার মনে হয়, সবার মা-বাবা হওয়া উচিত নয়! কারণ একটা সন্তান জন্মের পর তারা সেই সন্তানের সঙ্গে যেটা করেন, অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সন্তানের প্রাপ্য নয়। আমাদের চারপাশের সমাজের একটা চাপ থাকে মা-বাবা হওয়ার, আবার অনেক সময় সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টাকে সহজাতভাবে দেখেন মানুষ। তবে, আমার মতে যোগ্যতা লাগে সন্তান জন্ম দিতে। শুধু একটা মানুষকে পৃথিবীতে আনলেই হয় না!”

You cannot copy content of this page