“প্রত্যেকে আজ নিজেকে নায়ক-নায়িকা মনে করাটা সুস্থতা নয়, এটা একটা মহামারী!” “সেজেগুজে প্রতি মুহূর্তে রিল বানাতে হলে, জীবনটা তো ওখানেই শেষ!”— সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক-ফলোয়ারের দৌড়ে তরুণ প্রজন্মের মানসিক চাপ নিয়ে অকপট অন্বেষা দত্তগুপ্ত!

গান শুধু ‘অন্বেষা দত্তগুপ্ত’র (Anweshaa Dutta Gupta) জীবনের অংশ নয়, তাঁর জীবনদর্শনেরও প্রতিফলন। ছোটবেলা থেকেই রিয়্যালিটি শোর মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে যাত্রা শুরু, তা আজ বহুদূর এগিয়েছে। তাঁর কণ্ঠে একধরনের কোমলতা আর পরিণত সংযম— যা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। অনেকেই তাঁকে বলেন “দ্বিতীয় শ্রেয়া ঘোষাল”, কিন্তু অন্বেষা নিজের জায়গা নিজেই গড়েছেন। বাংলা হোক বা হিন্দি, শ্রোতারা জানেন তাঁর গান মানেই এক নিখাদ অনুভূতির প্রকাশ। কিন্তু গায়িকা হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি অন্বেষা নিজের জীবনের এক বড় অংশ উৎসর্গ করেছেন অন্যের জন্য।

গান ছাড়াও তিনি সক্রিয়ভাবে চালান একটি এনজিও, যেখানে অসহায় ও অনাথ শিশুদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেন। মজার বিষয় হলো, তিনি বিভিন্ন কনসার্টে গান করে যে অর্থ সংগ্রহ করেন, তা দিয়েই শিশুদের চিকিৎসা করান। আর পরিবর্তে প্রতিটি শিশুর পরিবার থেকে একটি করে পুতুল নিজের কাছে রাখেন ভালোবাসার স্মারক হিসেবে। এই মানবিক উদ্যোগ বছরের পর বছর ধরে অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অন্বেষা প্রমাণ করেছেন, শিল্পীর কাজ শুধু মঞ্চে নয়—সমাজেও তাঁর দায়িত্ব থাকে।

সম্প্রতি তিনি যে বিষয়ে সরব হয়েছেন, তা আজকের সময়ের অন্যতম বড় সংকট—সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর মানসিক চাপ। তাঁর ভাষায়, “মানসিক চাপটা আজকাল আর শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নয়, এই চাপটা আমরাও ডেকে আনছি প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবনে এবং সেটার জন্য সমাজ মাধ্যম একমাত্র দায়ী। প্রত্যেকে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নায়ক বা নায়িকা ভাবে। এটা কিন্তু কোনোভাবেই সুস্থতার লক্ষণ নয়, এটা একটা মহামারীর মতো! আমি স্ক্রিনে একটা জিনিস বা একজনকে দেখে খুব মুগ্ধ হচ্ছি।

তার মানে তো এটা নয় যে প্রাত্যহিক জীবনে আমাকেও শ্রীদেবীর মতো হতে হবে! নিজেকে যদি তেমন দেখানোর জন্য সেজেগুজে প্রতি মুহূর্তে রিল ভিডিও বানাতে হয় এবং সেটার থেকে কটা লাইক, কমেন্ট এবং দর্শকদের প্রতিক্রিয়া আসছে, তার জন্য যদি বসে থাকতে হয়– তাহলে জীবনটা তো ওখানেই শেষ!” অন্বেষার মতে, এই অবিরাম তুলনা আর লাইক-ফলোয়ারের দৌড় আমাদের আত্মপরিচয়কে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অন্বেষা এমন এক সত্য তুলে ধরেছেন, যা আজকের প্রজন্মের কাছে ভীষণ প্রাসঙ্গিক।

তিনি বলেন,”মানসিক চাপ এবং ব্যক্তিগত অসন্তোষ আমাদের জীবনের অতপ্রত অঙ্গ হিসেবে জুড়ে গেছে। একটা বাচ্চা থেকে বুড়ো পর্যন্ত, যতদিন না আমরা নেতিবাচক প্রভাবটা বুঝতে পারব। লক্ষ্য করতে যতদিন না পারবো যে মানসিকতা কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে, ততদিন এই অর্থহীন প্রতিযোগিতা চলতে থাকবে। একটা মানুষ যে অবসাদে ভুগছে সে, সমাজ মাধ্যমে বাকিদের পোস্ট দেখে আরো খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে। কারণ একটাই, সমাজ মাধ্যমে কেউ নিজের খারাপটা তুলে ধরে না। সেখানে শুধুমাত্র ভালো মুহূর্তদের দেখানো হয়।

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরে দারুণ চমক! মধুমিতার জন্মদিনে সৌরভের রহস্যময় ঘোষণা— নতুন জীবনে পা রাখছেন অভিনেতা?

আর্টিস্ট হিসেবে বলবো, বাচ্চাদের যতদিন এই প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখা যায় ততটাই ভালো। যেসব মা-বাবারা পারেন, অবশ্যই তাদের মেনে চলা উচিত” তাঁর কথাগুলো শুধু বক্তব্য নয়, বরং সামাজিক বার্তা— নিজেকে ভালো রাখার, নিজের জীবনের গতি বোঝার, আর বাস্তব ও ভার্চুয়ালের সীমারেখা চেনার। অন্বেষা তাই সুরের শিল্পী নন, তিনি এক চিন্তাশীল মানুষও। যিনি নিজের প্রতিভা দিয়ে যেমন শ্রোতাদের মন ছুঁয়েছেন, তেমনি সমাজকে ভাবতে বাধ্য করছেন। তাঁর এই সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে আলাদা করে