“কমেডির নামে সীতাকে স্লিভলেস পরিয়ে বিকৃত করতেন…বাম জমানার ওই পরিচালক এখনও কাজ করেন, তাঁর নীতি হেনস্থা করা!”— রূপাঞ্জনা মিত্রর অভিযোগে উত্তাল টলিপাড়া, নিশানায় এক প্রভাবশালী পরিচালক! কার দিকে ইঙ্গিত অভিনেত্রীর?

বিনোদন দুনিয়ায় আলো ঝলমলে পর্দার আড়ালেও লুকিয়ে থাকে অনেক না-বলা কষ্ট, অন্যায় আর অপমানের গল্প। টলিপাড়ার বর্তমান পরিস্থিতি যেন সেই বাস্তবতাকেই ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মঞ্চ আর ধারাবাহিক— দুই জায়গায় একসঙ্গে কাজ করতে গেলেই নানান অজুহাতে বাদ পড়ছেন শিল্পীরা! এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন অভিনেত্রী ‘তুলিকা বসু’, অভিনেতা ‘শঙ্কর চক্রবর্তী’ও। তাঁদের এই অভিজ্ঞতার প্রতিবাদেই প্রথমে মুখ খোলেন ‘রূপাঞ্জনা মিত্র’ (Rupanjana Mitra)। কিন্তু তিনি সেখানেই থামেননি।

বরং নিজের পুরনো এক অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে এনে আরও বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন ইন্ডাস্ট্রির কাজের পরিবেশ নিয়ে। রূপাঞ্জনা জানিয়েছেন, প্রায় দুই দশক আগের এক নন-ফিকশন কমেডি শো— ‘দশ অবতার’-এর শুটিংয়ের সময় তাঁকে এমন এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল, যা আজও তাঁর মনে দাগ কেটে আছে। তখন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন, তাই পরিচালকের অযৌক্তিক চাহিদার প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। সেই শো-তে তিনি সীতা চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, কিন্তু চরিত্রের উপস্থাপনা ছিল একেবারেই অদ্ভুত এবং অসম্মানজনক।

কমেডির নামে দেবী সীতাকে স্লিভলেস পোশাকে হাজির করা, দ্ব্যর্থবোধক সংলাপ দেওয়া— সব মিলিয়ে এক অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই সময়টাকে মনে পড়লে তাঁর অস্বস্তি ফিরে আসে। অভিনেত্রীর কথায়, তখনকার টেলিভিশন সংস্কৃতিতে অনেক কিছুই চুপচাপ মেনে নিতে হত, কারণ বিরোধিতা মানেই কাজ হারানো। তিনি বলেন, ওই শো চলাকালীন প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগতেন, এমনকি এক সময় তাঁর স্নায়ু বিকল হওয়ার উপক্রম হয়!

প্রতিযোগিতার চাপ, পরিচালকের রূঢ় আচরণ আর চরিত্র নিয়ে অকারণ ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’—সব মিলিয়ে তাঁর পক্ষে মানসিকভাবে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আজকের রূপাঞ্জনা নাকি সেই সময়ের মতো চুপ করে থাকতেন না। তিনি এক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “বাম জমানা ছিল বলে সাহস পেয়েছিলেন তিনি। আজ যদি সেই মানুষটি আমাকে এমন কিছু বলতেন, আমি নির্ভয়ে প্রতিবাদ করতাম।” যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কে ছিলেন সেই পরিচালক? রূপাঞ্জনা সরাসরি নাম প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন স্পষ্টভাবে।

তিনি জানিয়েছেন, ওই পরিচালক আজও ইন্ডাস্ট্রিতে সক্রিয়, ছোট থেকে শুরু করে বড়পর্দা— সব ক্ষেত্রেই কাজ করছেন। রূপাঞ্জনার দাবি, এই মানুষটির নীতি হল শিল্পীদের হেনস্থা করা, মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া। এমনকি তিনি তির্যকভাবে বলেছেন, “ওনার পরিচালনায় যতই যা দেখানো হোক না কেন, মানুষকে ছোট করে নিজের ক্ষমতা জাহির করাই ওঁর অভ্যেস।” পরিচালকের স্ত্রী একজন সাংবাদিক বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যেন বোঝানো যায়, ক্ষমতার আঁচল কত দূর পর্যন্ত ছড়ানো।

আরও পড়ুনঃ টলিউড কুইন হয়েও টলিউড নিয়ে বিরাট অভিযোগ, আক্ষেপ কোয়েল মল্লিকের! এত বছরের প্রতিষ্ঠিত কেরিয়ার, দীর্ঘ সময় ধরে টলিউডে শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও কোয়েলের মনে কোন আক্ষেপ রয়ে গেছে? তবে কি এবার পাকাপাকি ছাড়ছেন অভিনয়?

উল্লেখ্য, রূপাঞ্জনার বক্তব্য যেন ফুটে উঠেছে বর্তমান টলিপাড়ার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আজও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দৃঢ়ভাবে শিকড় গেড়ে আছে। যেখানে শিল্পীর সৃজনশীলতা বা সম্মান নয়, মুখ বুজে ‘হ্যাঁ’ বলা বেশি মূল্যবান। তাঁর অভিজ্ঞতা কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং সেই সমস্ত শিল্পীরও অভিজ্ঞতা, যারা নীরবে অন্যায়ের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। বহু বছর পর নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ্যে এনে রূপাঞ্জনা একটাই বার্তা দিয়েছেন— চুপ করে থাকা মানেই মেনে নেওয়া। কখনও কখনও নিজের গলার স্বরই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।