‘বিয়ে করে বালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া ছিলাম, ভালোবাসা একটা হয়েছিল…’ উত্তম কুমারকে নিয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের অকপট স্বীকারোক্তি! বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর আবেগঘন স্মৃতি চর্চার পর টলিউডে নতুন গুঞ্জন!

টলিউডের সেই সোনালি যুগের কথা উঠলে যে কয়েকটি মুখ প্রথমে মনে আসে, তাদের মধ্যে ‘সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়’ (sabitri Chatterjee) -এর নাম নিঃসন্দেহে অন্যতম। বহু দশক ধরে তিনি নিজের অভিনয় শক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, নায়কনির্ভর গল্পের ভিড়েও প্রতিভা থাকলে আলাদা করে জায়গা তৈরি করা যায়! কমেডি থেকে ট্র্যাজেডি, সব ধরনের চরিত্রে তার সাবলীল উপস্থিতি আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। অথচ এই দীর্ঘ যাত্রার মাঝেই তার ব্যক্তিজীবনকে ঘিরে নানা ভুল ধারণা, নানা রটনা বারবার সামনে এসেছে। আর সেসব নিয়েই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

সাবিত্রী দেবী জানিয়েছেন, উত্তম কুমারের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব একসময় এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, মানুষ নিজেদের মতো গল্প বানিয়ে নিতে শুরু করেছিল। কাজের সূত্রে দু’জনকে বারবার একসঙ্গে দেখা গেলেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রেমের গুঞ্জন উঠে আসত, যা পরে আরও বাড়িয়ে অন্য রূপ পেত! তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ঝরিয়ে বললেন, “আমাদের বন্ধুত্ব-টন্ধুত্ব সবাই ছিল, কারণ মানুষটা কিন্তু খারাপ ছিল না। মানুষই উল্টে ওকে খারাপ করেছে! কিছু তাবেদার থাকে না, তারাই ওটা করেছে। কিন্তু, এমনিতে ও খুব ভালো ছেলে ছিল। মনটা খুব ভালো, এটা আমি জানি।”

তার মতে, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণেই এসব রটনা একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তিনি আরও জানান, গল্পগুলোর মধ্যে অনেকটাই ছিল নিছক কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করার প্রচেষ্টা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা এমনভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল চিত্র তৈরি হয়েছিল জনমনে। সাবিত্রী স্মৃতি টেনে বলেন, “তিলকে তাল বানায় বিনোদন জগত! ভালোবাসা কি একটু হয়েছে কি না, সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলো যে বালিগঞ্জে নাকি বাড়ি ভাড়া করে আছে!

বালিগঞ্জ হয়তো দুই চার বছরে যাইওনি, ওরা বলছে বাড়ি ভাড়া করে আছি আবার উত্তম কুমারের সঙ্গে বিয়েও হয়ে গেছে আমার! কিরকম করে মানুষই তো এটা ছাপিয়ে দিলো!” তার কথায় স্পষ্ট, এই গুজবের জেরে কখনও কখনও নিজেকেও বিব্রত হতে হয়েছে তাকে। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, উত্তম কুমারের জন্য তার মনে বিশেষ অনুভূতি ছিল। কিন্তু সেই অনুভূতির নাম সম্পর্ক নয়! বরং তিনি মনে করেন, জীবনে কাউকে ভালোবাসলেও সেটা অপব্যবহার করার কোনও কারণ নেই। সাবিত্রী দেবী তাই বলেছেন, “তখন ‘সিনে অ্যাডভান্স’ বলে একটা ম্যাগাজিনে খবরটা বাড়িয়েছিল। সবটাই রটনা ছিল, এরম কোনদিনও হয়নি।

তাঁর সঙ্গে ভালোবাসা একটা হয়েছিল, এখনও ভালোবাসি, কিন্তু তাঁকে নিয়ে কুৎসা করব না!” তিনি আজও বিশ্বাস করেন, সম্পর্কের গভীরতা কথায় নয়, সম্মানে টিকে থাকে। তাই তার কাছে উত্তম কুমার কেবল নায়ক নন, একটি মূল্যবান স্মৃতি! সংসারের পথ না বেছে একা থাকার সিদ্ধান্তটিও তিনি নিয়েছিলেন সেই অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। বয়সের ভার পেরিয়েও প্রতি মুহূর্তে তিনি বুঝিয়ে দেন, মনের জায়গাগুলোকে তিনি এখনও আগলে রেখেছেন। স্টুডিওতে গেলে আজও তিনি মনে করেন সেই পুরনো দিনের স্পর্শ রয়ে গেছে কোথাও।

আরও পড়ুনঃ “দিব্যজ্যোতি নয়, আমার সূর্য হওয়ার কথা ছিল!” “ওরা আমাকেই নায়ক হিসেবে নেবে ঠিক করেছিল!” রাহুল মজুমদারের বিস্ফোরক দাবি! তিন বছর পর প্রকাশ্যে এল পর্দার আড়ালের সত্য! তাহলে কেন তিনি ‘অনুরাগের ছোঁয়া’তে নায়ক হলেন না? কী ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে?

সাক্ষাৎকারের শেষে তাই তার কথাগুলো আরও আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে যেন, “এখনও আমি মনে করি আত্মার মৃ’ত্যু নেই, সে আছে! স্টুডিওতে গেলে নমস্কার করি, যে একসময় তো এখানে উত্তম কুমারের সঙ্গে কাজ করেছি। হয়তো আজও ওনার সঙ্গে কোথাও দেখা হয়ে যেতে পারে!” একসময়ের সুপারহিট জুটি নিয়ে যত গল্পই তৈরি হোক না কেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। রটনার বাইরে সত্যি আরও নরম, আরও ব্যক্তিগত। আর সেই সত্যিটাই আজও তাকে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ব্যতিক্রমী এক অধ্যায় করে রেখেছে।