স্টার জলসার ‘চিরসখা’র (Chiroshokha) সাম্প্রতিক পর্ব যেন আবারও সামনে নিয়ে এসেছে সমাজের পুরনো মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। স্বতন্ত্রের বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজোর দিন কমলিনী সিন্নি মাখতে এগোতেই পাশের বাড়ির মহিলারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন! তাদের যুক্তি যে স্বতন্ত্র নাকি “ভুল করেছে”, কারণ সে বিয়ে করেছে এমন একজন মহিলাকে যিনি স্বামী ছেড়েছেন এবং যার তিনটি পরিণত সন্তান রয়েছে। কথাগুলো এতটাই কড়া ছিল যে মনে হচ্ছিল শুধু খাবার গ্রহণই নয়, কমলিনীর অস্তিত্বকেই তারা অশুদ্ধ ভেবে ফেলেছেন! প্রশ্ন উঠছে, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও কি সত্যিই এমন মানুষ আমাদের আশেপাশে আছে?
মজার বিষয়, ধারাবাহিকটি বারবার দেখিয়েছে কমলিনীর দৃঢ়তা। বহু না-পাওয়া সত্ত্বেও তিল তিল করে সংসারকে আগলে রাখার চেষ্টা। অথচ সেই নারীই পুজোর মতো একটা অনুষ্ঠানে এসে অপমানের মুখে পড়ল আর স্বতন্ত্রের বৌদি থেকে শুরু করে পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না। তাদের যুক্তি ছিল খুবই পরিচিত সেই পুরনো সমাজশিক্ষার, “একাধিক সন্তান থাকা মহিলার পক্ষে পবিত্র কাজ করা ঠিক না।” অথচ তারা একবারও ভাবেনি যে সংসার ভেঙে যাওয়া, একা বাঁচা বা সন্তান বড় হওয়া, এর কোনোটাই পবিত্রতার মাপকাঠি হতে পারে না!

এই পুরো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আবারও প্রশ্ন উঠছে, আমাদের বিনোদনের মাধ্যমগুলো কি এভাবে পুরনো মানসিকতাকে তুলে ধরে সমাজকে ভাবাতে চাইছে, নাকি অজান্তেই সেই মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? কারণ অনেক দর্শক আনন্দে গ্রহণ করলেও, কিছু মানুষ ভাবছেন যে মধ্যবয়সে এসে একজন মহিলার নতুন করে জীবন শুরু করা কি এতটাই অপরাধ? একদিকে আমরা আধুনিকতার দাবি করি, আবার অন্যদিকে একটি নারীর মর্যাদা তার ব্যক্তিগত জীবন বা সন্তানসংখ্যার হিসেব দিয়ে মাপতে বসে যাই।
অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষ দাস, যিনি কমলিনীর চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর মতে, এই বিয়েকে প্রেমের চেয়ে বেশি বন্ধুতা ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে দেখা উচিত। স্বতন্ত্রকে তিনি এমন একজন মানুষ হিসেবে দেখেছেন যিনি শুধু কমলিনী নন বরং তাঁর তিন সন্তানকেও গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁর ভাষায়, ‘চিরসখা’ নামের মধ্যেই বার্তা এই সম্পর্কের মূলে বন্ধুত্ব আর সম্মান! তা সত্ত্বেও, কমলিনীর প্রতি গল্পের চরিত্রগুলির প্রতিক্রিয়া এবং পরিবারের অস্থিরতা অনেকের মনেই দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনঃ “থিয়েটার করে বাংলায় পেট চালানো যায় না… তাই টলিউডে এসেছি”— বি’স্ফো’রক স্বীকারোক্তি কৌশিক সেনের মুখে! টলিউডে এমন কী হলো যে অভিজ্ঞ অভিনেতাকে স্পষ্টভাবে বলতে হল মনের গোপন কথা?
যেটা না বললেই নয়, এই ধারাবাহিকের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে যে সময় এগোলেও, মানসিকতার অনেকটা অংশ এখনও পেছনে পড়ে আছে। যে মহিলারা নিজেদের মতো করে জীবন কাটাতে চান বা একাকিত্ব কাটাতে কারও সঙ্গ গ্রহণ করেন, তাদের দিকে সমাজ আজও সন্দেহের চোখে তাকায়! সত্যনারায়ণ পুজোর ওই দৃশ্য যেন আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরল, পরিবর্তনের দাবি যতই জোরালো হোক না কেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করা এখনও সমাজের পক্ষে কঠিন!






