‘আমি তো বাবা, মেয়েকে দেখার ইচ্ছে হত কিন্তু…’ ‘সহানুভূতি পেতে মি’থ্যেকে বারবার বলে বিশ্বাস করালেও, সত্যিটা চাপা থাকে না!’ এবার প্রাক্তন স্ত্রী স্বরলিপির দিকে অভিযোগের আঙুল অভিনেতা সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের?

টলিপাড়ার পরিচিত মুখ স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়কে আজ অনেকেই চেনেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে, কিন্তু তাঁর জীবনের পরিসর শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের হাতে দাঁড় করানো ছোট্ট ক্যাফেটিও এখন তাঁর দৈনন্দিন পরিশ্রমের বড় অংশ। এই ক্যাফে গড়ে তোলার স্বপ্নটা একসময় স্বামী সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shoumo Banerjee) সঙ্গে মিলে দেখেছিলেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই ক্যাফেটি দাঁড়ালেও, ব্যক্তিগত জীবনে তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। ক্যাফেটা টিকে আছে এখন শুধু স্বরলিপির প্রচেষ্টায়। অভিনয়, ব্যবসা আর সন্তানকে নিয়ে নিজের মতো করে জীবনটা সামলে নিতে শিখেছেন।

এর মাঝেই তাঁর পডকাস্ট ‘আবার বৈঠক’ খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের নারীরা নিজের নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। ব্যক্তিগত জীবনে, স্বরলিপির পথটা ছিল যথেষ্ট কঠিন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি দেখেছিলেন সম্পর্কের ছায়া কত দ্রুত বদলে যেতে পারে। স্বামী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন আর তিনি নিজের শরীর-মন নিয়ে একা লড়ছেন। সেই সময় সাহায্যের বদলে তির্যক কথা থেকে উপহাস, এমনকি প্রয়োজনের মুহূর্তেও পাশে না থাকার অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। তাঁদের মেয়ের জন্মের পরে পরিস্থিতি আর সামাল দেওয়া যায়নি এবং বিচ্ছেদই শেষ সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।

আজ মেয়ে সহচরীকে তিনি একাই বড় করছেন। একসময় স্বরলিপি অভিযোগ করেছিলেন, তাদের সন্তান সহচরীরকে নাকি জন্মের পর আর দেখতেই আসেননি সৌম্য! স্বরলিপির এমন কথা প্রকাশ্যে আসতেই সমাজ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সবাই সৌম্যর চরিত্র নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, বাবা হিসেবে তার দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। স্বরলিপি আরও বলেন তাদের মেয়ে সহচরী বাবাকে খোঁজে না বরং বাবার মুখও দেখতে চায় না আর! কিছুদিন আগেই এইসব কথা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল তবে, সৌম্যর থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এতদিন পর নীরবতা ভেঙ্গে অবশেষে সৌম্য নিজের অবস্থান তুলে ধরলেন।

তিনি প্রথমেই জানান, নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে গোপন রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আজ আট বছর হয়ে গেছে ঘটনাটার, আগেই বলিনি আর এখনও কাউকে ছোট করতে চাই না খারাপ কোনও কথা বলে। মিথ্যেটা না বারবার, রোজদিন বলেই যেতে হয়। তাহলে মানুষের মনে গেঁথে থাকে, কিন্তু সত্যিটা বলার প্রয়োজন নেই। এটা মাটি খুঁড়ে এক না একদিন ঠিক বেরিয়ে পড়ে।” সৌম্য আরও জানান, দীর্ঘ অভিনয় জীবন থেকে পাঁচ বছরের একটা লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন ক্যাফে খুলবেন বলে। প্রথম একটি ছোট্ট জায়গায় ‘বৈঠক’ ক্যাফে খুলেছিলেন, কারোর সাহায্য ছাড়া জমানো পুঁজির অর্থ দিয়ে।

সেখানে কোন কর্মচারী ছিল না, তিনিই একা সব করতেন। পরবর্তীতে সেই ক্যাফে বন্ধ হয়ে গেলে, বড় জায়গায় ‘আবার বৈঠক’ ক্যাফে খোলেন তাঁরা। সৌম্যর কথায়, “তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলাম। নিজের সবটা দিয়েই দাঁড় করিয়েছিলেন আর ওটাই আমার রোজগারের তখন একমাত্র সম্বল ছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে কষ্ট হলেও আক্ষেপ নেই। তবে, বেরিয়ে আসার পর প্রথম ছয়মাস কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সম্পূর্ণ বেকার ছিলাম, পরিবার যদিও সব সময় পাশে ছিল। সত্যই খুব ভাগ্যবান আমি যে, এতবছর দূরে থাকার পরেও আবার অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি।”

আরও পড়ুনঃ কোনদিনও অ্যাঙ্কার হওয়ার স্বপ্ন‌ই ছিল না! চেয়েছিলাম গায়িকা হতে, ইচ্ছে অপূর্নই রয়ে গেল! এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আজও আক্ষেপ রয়ে গেছে লাজবন্তী রায়ের! তাকে অ্যাঙ্কার হিসেবে কেমন লাগত আপনাদের?

মেয়ে সহচরীর কথা উঠতেই কিছুটা গম্ভীরভাবে জানান, “আমি তো বাবা আর কোন বাবার ইচ্ছে করে না বলুন তো মেয়েকে দেখার? আমিও চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি তখন আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। সমাজ মাধ্যমে অনেক কথাই হয় আমাদের সম্পর্ক নিয়ে, কিন্তু আমাদের কথার মাঝখানে ছোট্ট মেয়েটা কে আনার কোন প্রয়োজন নেই। ওই সব বোঝে না, তাই এইসব বিতর্ক থেকে ওকে দূরে রাখাই ভালো। আমার যেখানে আত্মসম্মান থাকে না, আমি সেখানে থাকতে পছন্দ করি না। আত্মসম্মান আর ইগোর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সীমারেখা থাকে, সেইটা বজায় রেখেই বলছি আমার কাজ নিয়ে কথা হোক আর ব্যক্তিগত জীবনটা ব্যক্তিগতই থাক।”