“ব্যক্তিগত আ’ক্রমণটা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা করছে…সাহস থাকলে সামনে বলুন, জিভ-চোখ খুব’লে নিতে পারি!” সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদেও থামেনি কুৎ’সা, শুভশ্রীকে আক্র’মণ আরও চরমে পৌঁছনোয় বাধ্য হয়ে আইনের দ্বারস্থ রাজ চক্রবর্তী! পরোক্ষ ইঙ্গিত কার দিকে?

গত শনিবার, কলকাতায় মেসিকে (Messi In Kolkata) ঘিরে যে উৎসবের কথা ছিল, তা মুহূর্তের মধ্যে বদলে গিয়েছিল বিশৃঙ্খলা আর হতাশায়। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তৈরি হওয়া চরম পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ব্যবস্থাপনা এবং আয়োজকদের প্রস্তুতি নিয়ে। সেই ভিড়ের মধ্যেই উপস্থিত ছিলেন লেডি সুপারস্টার ‘শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়’ (Subhashree Ganguly)। যদিও একেবারেই ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিতে। কিন্তু মাঠের বাইরের ব্যর্থতার দায় যেন গিয়ে পড়ল তাঁর কাঁধেই। মেসির সঙ্গে ছবি পোস্ট করতেই, সামাজিক মাধ্যমে দ্রুতই শুরু হয়ে যায় কটাক্ষ!

যেখানে বারবার প্রশ্ন তোলা হয় তাঁর উপস্থিতির ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে! যেন জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী হওয়াটাই কোনও অপরাধ। এই সমালোচনার জবাব শুভশ্রী নিজে আগেই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে মানুষ একাধিক পরিচয় নিয়েই বাঁচে। কেউ একসঙ্গে বন্ধু বা ভক্ত হতে পারেন। কিন্তু সেই মানবিক বক্তব্যও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের ভাষা আরও ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে। পেশা, শরীরী গঠন, পরিবারকে টেনে এনে কুৎসা ছড়ানো হতে থাকে। যা যে কোনও সংবেদনশীল মানুষের জন্যই মানসিক চাপের কারণ।

এরপরই সামনে আসেন অভিনেত্রী স্বামী রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty)। প্রথম থেকেই তিনি পরিষ্কার করেন, শনিবারের ঘটনা ফুটবলপ্রেমী বাঙালির কাছে লজ্জার এবং দোষীদের শাস্তি হওয়া দরকার। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এত বড় অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার ঘাটতি কেন চোখে পড়ল? তাঁর কথায় এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে শুভশ্রীর কোনও সম্পর্ক নেই। একজন দর্শক হিসেবে মাঠে যাওয়ার অধিকার তাঁরও আছে। একজন নারীকে লক্ষ্য করে যে ভাবে ট্রোলিং আর ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে, তা সমাজ হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার দিকটাই সামনে আনে।

তবু রবিবার তাঁর এই অবস্থান জানানো পোস্টের পরেও সমালোচনার স্রোত থামেনি। সমালোচনা যখন ক্রমশ হুমকি আর নোংরা ইঙ্গিতে রূপ নিতে শুরু করে, তখন বাধ্য হয়েই রাজ নেন কড়া সিদ্ধান্ত! সোমবার সকালে তিনি জানান, আইনি পথেই এবার লড়াই হবে। থানায় এফআইআর দায়ের করার কথা জানিয়ে তিনি সরাসরি আঙুল তোলেন তাঁদের দিকে, যারা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালাচ্ছেন! তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল ক্ষোভ আর প্রতিবাদের সুর। তিনি বলেন, “থানাতে ইফআইআর করলাম একটা।

একজন নারীকে যেভাবে কুৎসা এবং নোংরা ইঙ্গিত ও তাঁর শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে পরিবার এবং সন্তান নিয়ে যারা এগুলো করছে, আমি তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে এবার। ব্যক্তিগত আক্রমণটা মূলত, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই করছেন! শনিবার যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়, কিন্তু সেটা নিয়ে যারা শুভশ্রী এবং তার মতো মহিলাদের কু-ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলছেন, আমি সেসব মানুষদেরকে ঘৃণা করি। সেটা শুধু আমার ঘনিষ্ঠ লোক বলে নয়, যেকোনও মহিলাকে কেউ যদি নোংরা কথা বলে আর সেটা যদি রাস্তায় বা সমাজ মাধ্যমও হয়, আমি প্রতিবাদ করেই ছাড়ব!

আরও পড়ুনঃ “আমরাই পারলাম না, অন্য রাজ্য করে দেখাল…বাংলার মানুষের গায়ে দাগ হয়ে গেল, ভারতের কাছে লজ্জা” মেসি-কাণ্ডে আক্ষেপ মেগাস্টার দেবের! যুবভারতীর বিশৃঙ্খলায় কার দায়িত্বের প্রশ্ন তুললেন তিনি?

সাহস থাকলে আমার সামনে এসে বলুক কেউ, আমি তার জিভ এবং চোখ দু’টোই খুবলে তুলে নিতে পারি!” এই বক্তব্যের মধ্যে শুধু স্বামীর রাগ নয়, ছিল একজন নাগরিকের দায়বদ্ধতাও। রাজের মতে, আজ যদি এই ধরনের আচরণকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেটাই হয়ে উঠবে নেতিবাচক শিক্ষার অধ্যায়। শুভশ্রীকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা আসলে একজন ব্যক্তির চেয়েও বড়, এটা নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাই এই লড়াই মানবিকতার পক্ষে দাঁড়ানোর কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।