ক্যা’ন্সারের বিরুদ্ধে চারটি অস্ত্রোপচার বদলে দিয়েছে চেহারা, তবুও অদম্য মানসিক শক্তি দিয়ে পাশে থেকেছেন স্ত্রী! অভিনেতার আলোয় দাঁড়িয়ে যিনি ছায়া হয়ে লড়েছেন, শরিব হাশমির জীবনে স্ত্রীর অসীম ত্যাগের গল্পটা জানেন?

বেশ কিছু মানুষ জীবনের কঠিন সময়ে নিজেদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একজন সঙ্গী খোঁজেন। এমন একজন সঙ্গী, যার সাথে তাদের মনের মিল থাকবে আর বিশ্বাসের জায়গায় টিকে থাকতে পারবে। কিন্তু কিছু সম্পর্ক সেই সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়, যেখানে শুধু পারস্পরিক সহযোগিতা আর সমর্থন নয় বরং জীবনের প্রতিটি লড়াই একসাথে ভাগ করে নেওয়ার প্রমাণও মেলে। সম্পর্ক ভাঙনের যুগে দাঁড়িয়ে, এমনই এক দম্পতি হলেন অভিনেতা শরিব হাশমি (Sharib Hashmi) ও নাসরিন হাশমি (Nasreen Hashmi)। যারা একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে চলেছেন প্রায় তিন দশকেরও বেশি ধরে।

দীর্ঘ ৩০ বছরের বিবাহিত জীবন তাদের জন্য কখনোই মসৃণ ছিল না। জীবনে চরম দারিদ্র্য আর অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। এক সময় স্বামী শরিব তার স্থায়ী চাকরি ছেড়ে অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, ছেলে তখন খুবই ছোট। সালটা ছিল ২০০৯, সেই সিদ্ধান্ত তাদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটায়। এমন সময়, যখন তাদের সঞ্চয় প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল, স্ত্রী নাসরিন তার গয়না বিক্রি করে এবং বাড়ি বন্ধক রাখে যাতে সংসার চালাতে পারে। তাঁর এই আত্মত্যাগ এবং প্রেম যেন স্বামীর জীবনে অন্যতম শক্তির উৎস।

জীবনের কোনও সংগ্রামের মুহূর্তে তারা একে অপরকে ছেড়ে যাননি। সব সময় পাশে থেকেছে। জীবনে হাজার রকমের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়লেও, অভিনেতার কাছে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিলো স্ত্রীর ক্যা’ন্সারের সঙ্গে লড়াইতে পাশে থাকা। ২০১৮ সালে স্ত্রীর মুখের ক্যা’ন্সার ধরা পড়ে। এরপর ৪ বার অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাকে। প্রতিবার কঠিন অস্ত্রোপচারের পরও নাসরিন নিজের মনোবল হারাননি। অভিনেতাকেও ভেঙে পড়তে দেননি তিনি। ওই সময়, যখন সদ্য অস্ত্রোপচার করিয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রী সংসার সামলাচ্ছে।

বাইরে নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের সেরা অভিনয়টা দিয়েছেন শরিব হাশমি। আর তা সম্ভব হয়েছে তার স্ত্রীর অটুট মনোবল এবং সহানুভূতির কারণে। সম্প্রতি অভিনেতা জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে দিনরাত হাসপাতালের বাইরে প্রার্থনা করতেন যেন তার স্ত্রী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আজ তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে স্ত্রীর অব্যক্ত সাহস এবং দৃঢ়তা তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলো এবং এই সময়ে তাদের জীবনযাত্রা যেমন কঠিন ছিলো, তেমনি তাদের সম্পর্কও আরও গভীর হয়েছে।

অনেকেই যখন তাদের জীবনে সংকটের পরিসীমা দেখে মনে করেছিলেন হয়তো তারা একে অপরকে ছেড়ে চলে যাবে, তখন একে অপরের হাত আরও শক্ত করে ধরেছেন তারা। অভিনেতার ছোট-বড় সব সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীর মতামত আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন তিনি। ২০১৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে, যখন অভিনেতা সফলভাবে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর মতো হিট সিরিজের তিনটি খন্ডে অভিনয় করে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যান, তিনি জানতেন এতেও তার স্ত্রীর অবদান আছে অপরিসীম।

আরও পড়ুনঃ “মানুষের ধারণা ট্রান্সজেন্ডার মানেই দে’হ ব্যবসায় জড়িত! মা-বাবার ভালোবাসা ছাড়া আজ এই পর্যন্ত আমি পৌঁছাতে পারতাম না! আমরা ভালোবাসি, তারা ব্যবহার করে”— অকপটে মনের কথা ভাগ করলেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের! সমাজের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুললেন অধ্যক্ষা!

তার জীবনের এই কঠিন সময়গুলো আর পর্দার চরিত্রের মধ্যে এক অদ্ভুত সমান্তরালতা রয়েছে। যেমন তার চরিত্র ‘জে.কে.’ তার বন্ধুকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি তার স্ত্রীও ছিলেন তার জীবনের সেরা সহকারী। জীবন ও কাজের মধ্যে এই সংযোগ, একে অপরকে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের সম্পর্ককে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অভিনেতার মতো তার স্ত্রীও এক ধরনের নীরব নায়িকা, যিনি তার স্বামীকে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তার কষ্টকে নিজের হিসেবে গ্রহণ করেছেন।