সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলায়, বদলায় মূল্যবোধের ভাষাও। এই বদলের মাঝেই কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা জনপ্রিয়তার বাইরেও নিজের ভাবনা স্পষ্ট করে বলতে দ্বিধা করেন না। ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar) ঠিক তেমনই এক পরিচিত মুখ। নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী হিসেবে যেমন, তেমনই নিজের মতামত প্রকাশের সাহসের জন্যও তিনি জনপ্রিয়। নানা সামাজিক বিষয়ে তাঁর মন্তব্য প্রায়ই আলোচনার কেন্দ্রে আসে। তাতে কখনও প্রশংসা আবার কখনও সমালোচনা, দুটোই সমানভাবে জোটে।
মমতার বক্তব্যের একটি বড় অংশ ঘুরে ফিরে আসে শিশুদের বেড়ে ওঠা ও সেখানে বড়দের ভূমিকা নিয়ে। তাঁর মতে, আজকাল ছোটখাটো বিষয়েও অভিভাবকরা খুব দ্রুত জড়িয়ে পড়ছেন। বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি বা মতবিরোধ তো বড় হওয়ার স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু সেই জায়গায় বড়রা ঢুকে পড়লে শিশুদের নিজের মতো করে সমস্যা মেটানোর সুযোগ কমে যায়। এতে তারা আত্মনির্ভর হতে শেখে না বরং সব সমস্যার সমাধান বাইরের কারও কাছ থেকে আসবে, এই ধারণা তৈরি হয়।
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। আগের দিনের স্কুলজীবনের কথা মনে করলে তিনি দেখেন, শিক্ষকরা শাসনের মধ্য দিয়েই দায়িত্ববোধ আর শৃঙ্খলার পাঠ দিতেন। সেই শাসন ছিল সীমার মধ্যে, কিন্তু তা ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রেখেছে। আজকের দিনে শিক্ষকরা অনেক সময় চাপের মধ্যে থাকেন, অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কঠোর হতে পারেন না। ফলে শিক্ষা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় আর আচরণগত শিক্ষা অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে।
আর এখানেই মমতা শঙ্করের মূল আপত্তি, সব বিষয়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ! তিনি মনে করেন, সন্তানদের পাশে থাকা আর সবকিছু নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মধ্যে ফারাক আছে। ছোটদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ দেওয়া জরুরি। ভুল করলে তা থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই তো জীবনের আসল পাঠ। বড়রা যদি সবসময় ঢাল হয়ে দাঁড়ান, তাহলে সেই শেখার প্রক্রিয়াটাই বাধাগ্রস্ত হয়। নিজের কথা তুলে ধরেই তিনি বলেন, নাচের ছাত্রীদের দরকার হলে শাসন করেন আবার ভালোবাসেন।
আরও পড়ুনঃ “বিয়ে করতে গেলে অনেক খরচ হয় বরং সেই টাকায় ….” — বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা চান অভিনেত্রী উষসী রায়? কী থেকে হঠাৎ বিয়ে না করার ভাবনা অভিনেত্রীর?
তাঁর কথায়, যেসব শিক্ষকরা ছোটবেলায় সবচেয়ে বেশি শাসন করেছে বড় হলে তাদেরকেই মনে রাখে ছাত্ররা। কারণ সেইসব শিক্ষাকই জীবনে আসল শিক্ষাটা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এইসব বলে যে সমালোচনা পান, তা নিয়ে মমতা বিশেষ বিচলিত নন। বরং নিজের সময়ের সমাজ থেকে পাওয়া শিক্ষাকে তিনি সম্মানের চোখে দেখেন। তাঁর বিশ্বাস, নিজের ভাবনা প্রকাশ না করলে নিজের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। তাই সমাজের যেসব দিক তাঁর চোখে প্রশ্নের জন্ম দেয়, সেগুলো তুলে ধরতে তিনি পিছপা হন না।






