আমাদের সমাজে অনেক সংস্কার প্রচলিত আছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই সংস্কার আমাদের বড়রা এখনো সেই সংস্কার অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন বলতে গেলে ছোটদের সেই সংস্কারগুলো মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। কিছু সংস্কার হয়তো ভালো কিন্তু কিছু সংস্কারের কোন যুক্তি থাকে না।
জি বাংলায় বিগত এক মাস ধরে শুরু হয়েছে নতুন সিরিয়াল গৌরী এলো।মূলত ধার্মিক ভাবধারায় তৈরি এই সিরিয়াল নিয়ে শুরুর দিকে প্রচন্ড বিতর্ক হয়েছিল যে বর্তমানে যুক্তিবাদী এই সমাজে কী করে শুধু ধর্মের উপর ভিত্তি করে একটা সিরিয়াল চালানো হয়। অনেকেই বলেছিলেন যে এই সিরিয়ালে এবার শুধু বুজরুকি দেখানো হবে। ধর্মের নামে কুসংস্কার দেখানো হবে আর সাধারণ মানুষ তাই গিলবে।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত গৌরী এলো যেন তার নিন্দুকদের মুখে ঝামা ঘষে যাচ্ছে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসার ছবি কে গৌরীর পুজো করা নিয়ে অনেক ট্রোলিং হয়েছিল বটে কিন্তু একটা কথা ভুললে চলবে না গৌরী একদম অজপাড়া গ্রামের মেয়ে তার উপর সে ততটা শিক্ষিত নয় তাই লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাকে তার চেনার কথা নয়।মোনালিসাকে ঠাকুর ভেবে পুজো করে সে কিন্তু বাস্তব দিক থেকে কোন ভুল করেনি যদি আমরা তার ব্যাকগ্রাউন্ড বিচার করি।
এখন গৌরী আর ঈশানের সামাজিকভাবে বিয়ে দেখানো হচ্ছে আর সেখানে শৈল মা বারংবার বাঁধা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু গৌরী মায়ের আশীর্বাদে সব বাধা কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর শৈল মা’র মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা দেখেছি হলুদের বাটি লুকিয়ে রেখেছে ঈশানের বৌদি কিন্তু ঈশান নিজের গাল থেকে হলুদ নিয়ে গৌরির গালে মাখিয়ে গায়ে হলুদ সম্পন্ন করেছে।
কিন্তু আজকে থেকে এক সপ্তাহ আগে আমরা একটা এপিসোড দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।সেই নিয়ে সেই সময় হয়তো অত আলোচনা হয়নি কিন্তু কোথাও গিয়ে আমাদের টিমের মনে হয়েছে যে একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সেই জিনিসটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার।
ঈশানের দিদি নীলার ডান হাত অক্ষম। সে নিজের ডান হাত দিয়ে কোন কাজ করতে পারে না। ঈশান গৌরীর বিয়ে শুরুর আগে আশীর্বাদ যখন সে করতে যায় তখন সে নিজের ডান হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতে না পারায় তার চোখ দিয়ে কষ্টে জল বেরিয়ে যায়।সেই দেখে গৌরী ঝটপট তার বাঁ হাত নিজের মাথায় তুলে নিয়ে বলে, নীলা দিদি তুমি বাঁ হাত দিয়েই আমাকে আশীর্বাদ করো।
সেই দেখে ঈশানের বৌদি বলে ওঠে বাঁ হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতে নেই, তাতে অমঙ্গল হয়।নীলা ভয়ে হাত সরিয়ে নেয় কিন্তু তখন গৌরী বলে যে, মা কি বলে দিয়েছে কোন হাতটা ভালো কোন হাতটা খারাপ? আমাদের দুটো হাতই তো সমান।পিক কোনটা পয়া কোনটা অপয়া কোনটা কম কাজ করে কোনটা বেশি কাজ করে সেটা তো আমরাই ঠিক করেছি।তাই নীলা দিদি আমাকে বাঁ হাত দিয়েই আশীর্বাদ করবে আর আমি জানি নীলা দিদি আমাকে মন থেকে আশীর্বাদ করবে কারণ আশীর্বাদ তো মন থেকেই হয়।
তার এই অকাট্য যুক্তি শুনে উপস্থিত সকলে হতবাক হয়ে যায় এবং গৌরীর মানবিকতা ও বুদ্ধি দেখে ঈশানের বাড়ির লোকেরা চমৎকৃত হয় কয়েকজন বাদে। নীলা দিদি তাকে মন ভরে বাঁ হাত দিয়েই আশীর্বাদ করে। ঈশান তখন মনে মনে ভাবে এটাই তো তার গৌরী।
সত্যিই তো গৌরী তো ঠিকই বলেছে। কোনটা পরে কোনটা অপয়া সেটা তো আমরাই ঠিক করেছি। ভগবান তো আমাকে দুটো হাত সমান বানিয়েছে তাহলে দুটো হাতের মধ্যে আমরা বিভেদ করবো কেন? গৌরী এলোর এই এপিসোড সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক কুসংস্কারকে এক ধাক্কায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল যা দেখে বাহবা জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।