আজকাল বিনোদনের দুনিয়ায় ডবল ডোজ নিয়ে এসেছে বাংলা সিরিয়াল। যাকে বলে চেরি অন দ্য কেক। একটা গোটা কর্মব্যস্ত দিনের পর সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি এইটুকু টাইম দর্শকরা নিজেদের মতো করে কাটাতে চায়। একটু হেসে, আনন্দে সময় কাটাতে চাই আর তাই তারা বেছে নেয় বাংলা সিরিয়াল।
বাঙালি দর্শকদের বিনোদনের অন্যতম খোরাক এই বাংলা সিরিয়াল। শুধু আজ থেকে নয় যবে থেকে সিরিয়ালের পথ চলা শুরু হয়েছে তবে থেকেই এই বিষয়টা এবং সেটা নিয়ে উত্তেজনা আজ অবধি একইরকম থেকে গেছে। কিন্তু বর্তমানে দর্শকদের মনে আস্তে আস্তে অভিযোগ দানা বাঁধছে সিরিয়াল নিয়ে।
কেনো? দর্শকদের বক্তব্য ধীরে ধীরে সিরিয়ালের মান কমে যাচ্ছে। গল্পের কোন বিষয়বস্তু নেই। বিনোদন নয় বরং তার জায়গায় টিআরপি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক বুদ্ধি বেশি পরিমাণে জায়গা নিয়েছে। আর তার জন্যই লোভের বসা ধারাবাহিকে নানা আজগুবি গল্প ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাঝ পথে।
আগে একটা সময় ছিল যখন একটা নির্দিষ্ট ট্রেন্ড ফলো করত বাংলা সিরিয়াল। নায়ক নায়িকার আলাপ হবার কিছুদিন পর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে আস্তে আস্তে প্রেম এবং অবশেষে বিয়ে হত। এখন তো বিয়ে দিয়ে শুরু হচ্ছে গল্প। কোথাও কোথাও আবার বিয়ে নিয়ে নানা ধরনের পর্ব। উড়ন্ত সিঁদুর দান, উড়ন্ত মালা বদল এই সমস্ত কিছু এখন চলছে ব্যাপকভাবে।
সাহেবের চিঠি নবাব নন্দিনী মাধবীলতা এবং সম্প্রতি শুরু হওয়া হরগৌরী পাইস হোটেল থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট যে এখন বিয়ে দিয়েই আসল গল্প তৈরি করা হচ্ছে। নারী কেন্দ্রিক চরিত্র থাকলেও সেখানে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে শুধুমাত্র সংসার সামলানো আর শ্বশুর বাড়ির মন জয় করাকেই দেখানো হচ্ছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ দর্শক। কেন মহিলাদের এতটা দুর্বল হিসেবে দেখানো হচ্ছে? কেন কোন মহিলা স্বাবলম্বী হলেই তাকে খারাপ চোখে দেখানো হচ্ছে? চাকরি করা এক মহিলাকে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিতে হচ্ছে সেই নিয়ে কোন প্রতিবাদ নয় বরং সেটা কি বিষয়বস্তু করে কেন তুলে ধরা হচ্ছে? এই সমস্ত রকমের প্রশ্ন তুলে ধরেছে দর্শক।
তার উপরে তো রয়েছে একাধিক বিয়ে এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক অর্থাৎ পরকীয়া। জি বাংলা স্টার জলসা সব ক্ষেত্রেই এই একই বিষয় ফুটে উঠেছে। সাহেবের চিঠি কয়েকদিনের মধ্যেই সাহেব আর চিঠির বিয়ে হয়ে গেল। নবাব নন্দিনী ধারাবাহিকের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম। ওদিকে আবার স্টার জলসার মাধবীলতা ধারাবাহিকও একই খাতে বইছে গল্প। তবে টিআরপি দেখতে গেলে সেইদিক থেকে ভালো।
তবে দর্শকদের বক্তব্য টিআরপি ভালো হলে কী হবে যদি গল্প হয় সেই বস্তাপচা? ইতিমধ্যেই মাধবীলতা শুরু হবার পর থেকে কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে ধারাবাহিককে ঠিক এই কারণে। গাছ, জঙ্গল বাঁচানোর প্রতি নায়িকার প্রেম ভালবাসা দিয়ে গল্প শুরু হয়েছিল। এবার সেখানে ঢুকে গেল বিয়ে। তাই এখন নতুন ধারাবাহিক গেলেই দর্শকরা অনুমান করে নিচ্ছে প্রথম সপ্তাহ কাটে না কাটতেই বিয়ের পর্ব চলে আসবে। তারপরেই নানা ধরনের আজগুবি গল্প জায়গা নেবে।