“অভিনয়ে এসেছিলাম বলে ঠাকুরদা বলেছিল গুলি করে মেরে দিতে” অকপট বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

নাট্য মঞ্চ থেকে সিনেমা তার অভিনয় বারবার মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। নিজের অভিনয়কে হরিয়ার করেই তিনি এগিয়ে গেছেন অভিনেত্রীর অনির্দিষ্ট, দুর্গম পথে। উনিশের দশক থেকে বর্তমান সময়েও তার অভিনয় একইভাবে প্রভাব ফেলে মানুষের মনে। উৎপল দত্ত থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বাংলায় দ্বিগজ অভিনেতাদের সঙ্গে সমান দক্ষতায় মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। তিনি বাংলার স্বর্ণযুগের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চ্যাটার্জী।

মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করেছিলেন অভিনয়। থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরেই তিনি এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। সম্বল আত্মবিশ্বাস, অভিনয়ের খিদে। বাবা ছিলেন পেশাদার ডাক্তার, মা স্কুল শিক্ষিকা। ফলেই বাড়িতে ছিল না অর্থাভাব। কিন্তু কোনদিনও পরিবারের সাহায্য নিতে চাননি অভিনেত্রী। নিজের উপার্জিত অর্থের তিনি কাটিয়েছেন জীবন। যদিও জীবনে চলার পথের ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন তার স্বামী। সংসারের বেড়াজাল পেরিয়ে তিনিই তাকে দিয়েছিলেন উড়ে যাওয়ার জন্য খোলা আকাশ।

নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছেন রঙ্গমঞ্চে। উত্তম কুমার থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সকলের পরিচালিত নাটকেই অভিনয় করেছেন তিনি। তবে মূলত থিয়েটারকে। ভালবাসতেও একের পর এক সিনেমাতে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাঙালি সিনেমা প্রেমীদের। সাত ভাই চম্পা, সাঁঝবাতির রূপকথা, অচিন পাখি, চারুলতা, কালবেলা, ১০০% লাভ, উজানতলি, বিপর্যয়, গুলদস্তা, পরমা সহ একাধিক সিনেমাতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে শুধু সিনেমাতেই নয়, ধারাবাহিকেও তার অভিনয় অতুলনীয়। তোমায় আমায় মিলে, পটল কুমার গানওয়ালা, আয় তবে সহচরী সহ একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি।

 

অভিনয় জগতে আসার কারণে কি কি সহ্য করেছেন ছন্দা চ্যাটার্জী?

বর্তমানে জি বাংলার অষ্টমী ধারাবাহিকের অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। প্রায় ৮০ বছরের দুর্গম জীবনের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন “প্রথমে তো আমার বাবা, মা কেউই রাজি ছিলেন না। একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম তারপর আমায় যখন জিজ্ঞাসা করা হল অভিনয় করব কিনা আমি রাজি হয়ে গেছিলাম। আমি বাবা মায়ের প্রথমে কেউই রাজি হয়নি। অভিনয়ে এসেছিলাম বলে আমার দাদু তো বলেছিলেন ওকে গুলি করে মে’রে দা’ও। তবে তারপর আসতে আস্তে সবাই মেনে নিয়েছিলেন।” অভিনেত্রী এও জানান বাবা ডাক্তার, মা শিক্ষিকা তবুও তাদের থেকে একটা টাকাও নিতেন না তিনি। নিজের উপার্জনের টাকায় চালাতেন জীবন।

আরও পড়ুন: চিরবিদায়! শেষবারের মতো হল শুটিং, জি বাংলার পর্দা থেকে বিদায় নিচ্ছে কার কাছে কই মনের কথা!

স্বামীর প্রয়াণের পর কেমন আছেন ছন্দা চ্যাটার্জী?

অভিনেত্রী কথায়, “কখনও খেতে পেতাম। কোন কোনদিন খাইনি। এমনকি টিনের তলোয়ারের সময় যখন পুরস্কার পেয়েছিলাম তখনও না খেয়েই আমি গিয়েছি। সারাদিন শুধু ২টো বিস্কুট খেয়ে কাটিয়েছি। রাত্রে আসার সময় মুটি কিনে এনেছি। আমার দুই ছেলে। আমি তো আমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। আমার স্বামীর আগের পক্ষের ছেলে আছে তার সঙ্গেও আমার খুব ভালো সম্পর্ক। আমারও ছেলে আছে কিন্তু আমি ওদের থেকে কিছু চাইনা আমার খরচ আমি নিজে রোজগার করি। যদিও আমি যায় ওদের কাছে। তবে আমার স্বামী আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। আমায় সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকি আমি শুটিংয়ে বাস চালিয়ে সবাইকে নিয়ে গেছি, কখনও দেরি হয়েছে আসতে কিন্তু কোনদিন কিছু বলেননি। সবসময় আমার পাশে ছিলেন। আমি যা হয়েছে ওনার জন্য। আগে আমি ওনাকে মামা বলে ডাকতাম। তারপর তো পড়ে বিয়ে হয়েছে। এখন দিনের বেলা কিছু মনে না হলেও রাত্রে সব নিঝুম হয়ে গেলে একা লাগে, ওনার কথা মনে পড়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। শরীরকে ভালো না থাকলে অভিনয় করব কিভাবে? অভিনয়ের খিদে নিয়েই হয়ত আমি মরে যাবো।”