বিগত কয়েক বছর ধরে বহু জনপ্রিয় বাঙালি শিল্পীরা আছেন, যাঁরা মায়ানগরীতে পা বাড়িয়েছেন। এমন নয় যে তাদের এখানে কাজের অভাব বা সাফল্য নেই, তারা উল্টে অনেকের থেকেই বেশি সফল ছিলেন একটা সময়। আর দিনদিন বাংলা ছেড়ে অভিনেতা অভিনেত্রীদের অন্যত্র অভিনয় করতে যাওয়ার প্রবনতাটাও বেড়েছে। দর্শকদের মধ্যেও ইদানীং একটা অভিযোগ বেশ জোরালো হচ্ছে যে, বাংলা টেলিভিশনে বিশেষ করে কিছু অভিনেত্রী একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন, তারা হিন্দি সিরিয়ালে গিয়ে খুব একটা সাফল্য না পেলেও আর ফিরছেন না আপন ঘরে!
এই ক্ষেত্রে দর্শকদের এই কথাটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলা যায় না। কারণ অনেকে মনে করেন, মুম্বইয়ে পা রাখার পর বেশ কয়েকজনই যেন আর বাংলার মাটিতে দাঁড়াতে চান না। অথচ তাঁদের অভিনীত বাংলা ধারাবাহিকগুলো আজও দর্শক মনে করে। এই কারণেই একাংশের মতে, মাঝারি সাফল্য নিয়েই যেন তারা বড়সড় উচ্চাকাঙ্ক্ষার দলে নাম লেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রসঙ্গত, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়কে নিয়ে দর্শকদের ক্ষোভটা বেশ খোলামেলা। স্টার জলসার নায়িকা হিসেবে তিনি একসময় পরপর হিট দিয়েছেন, এটা অস্বীকার করা যায় না।
‘সাঁঝের বাতি’ থেকে শুরু করে, ‘সাহেবের চিঠি’তে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকদের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু হিন্দিতে পা রাখার পর তাঁকে দেখা গেল কালার্স-এর ‘সুহাগান চুড়েল’ ধারাবাহিকে, যেখানে তিনি প্রধান চরিত্রে থাকলেও ধারাবাহিকটি খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। দর্শকদের দাবি, ব্যর্থতাটা চেপে রেখে তিনি আবারও বাংলায় ফিরে এলেই তো ভালো হতো, কিন্তু সে পথে তিনি হাঁটলেন না। এখানেই অনেকের মনে সন্দেহ জন্মেছে, তাহলে কি হিন্দির ঝলমলে পর্দা তাঁদের কাছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
অভিনেত্রী অদ্রিজা রায়কেও নিয়ে এমনই প্রশ্ন ঘুরছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে স্টার প্লাসের দুটি বড় ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গেল, ‘ইমলি’ এবং এখন ‘অনুপমা’। কিন্তু বাঙালি দর্শকদের কথা শুনলে মনে হয়, তিনিও সেভাবে নজর কাড়তে পারছেন না। অনেকে আবার বলছেন, হিন্দি সিরিয়ালে আলাদা করে নিজের জায়গা তৈরি করা কঠিন, এটা ঠিক কিন্তু তাও বাংলায় না ফেরার সিদ্ধান্তটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যে ইন্ডাস্ট্রি তাঁর পরিচয় তৈরি করেছে, সেই ইন্ডাস্ট্রি যখন ডাকছে তখন কেন দূরত্ব?
মিষ্টি অভিনেত্রী দেবত্তমা সাহার ক্ষেত্রেও একই ধরনের মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। বাংলা ধারাবাহিক দিয়ে যাঁর অভিনয়জীবনের শুরু, তিনি এখন হিন্দি সিরিয়ালেই বেশি ব্যস্ত। ‘শৌর্য অর আনোখি কি কাহানি’ কিংবা ‘কৃষ্ণ মোহিনী’ দুটি ধারাবাহিকেই তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু বাংলা দর্শকদের দাবি যে একটু ব্যর্থতা বা একটু সাফল্য পেলেই অভিনেত্রীদের যেন আর বাংলার কাছে ফিরে আসার ইচ্ছা থাকে না। তাদের অভিযোগ, ‘বাংলায় থাকলে নাকি কম গ্ল্যামার, কম সুযোগ! তাই একটু আলো দেখলেই ভুলে যান নিজের শিকড়।’
আরও পড়ুনঃ টিআরপিতে বাজিমাত স্টার জলসার! শীর্ষে ‘পরশুরাম’, শোলঙ্কি-গৌরব জুটি ফিরেই হিট! প্রথম সপ্তাহেই ঝড় তুলল ‘মিলন হবে কত দিনে’! ‘পরিণীতা’ ছাড়া জি বাংলার কোনও ধারাবাহিক দাগ কাটতে পারল না তালিকায়!
সব মিলিয়ে দর্শকদের একটি বড় অংশের ক্ষোভ খুব পরিষ্কার যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যাদের বড় করে দিয়েছে, তারা যেন সুযোগ পেলেই অন্যত্র পাড়ি দেন? কিন্তু ব্যর্থ হলে আর ফিরে তাকান না! যদিও প্রত্যেকের সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব, তবুও সাধারণ দর্শকদের এই অভিমানকে অস্বীকার করা যায় না। টলিউড থেকে বলিউডের যাওয়া কারোর পথবন্ধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু বাংলা দর্শক যে প্রত্যাশা নিয়ে তাঁদের ভালোবাসেন, সেই প্রত্যাশাকে সম্মান দেখানোটাই হয়তো শিল্পীর প্রকৃত দায়িত্ব।






