আগে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাকে আলাদা চোখে দেখা হলেও বর্তমানে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার দাপটের সৌজন্যে এখন বলিউড এবং দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলি সমগোত্রীয়। একই সঙ্গে সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত বহু এমন তারকা রয়েছেন যারা আদতে দক্ষিণ ভারতীয় হয়ে হিন্দি সিনেমা জগতে নিজেদের অভিনয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন। শ্রীদেবী, জয়াপ্রদা, রেখা, বর্তমান সময়ে সামান্থা, রশ্মিকা মন্দনা, শ্রুতি হাসানের মতো একাধিক অভিনেত্রী বলিউডে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন বা করে চলেছেন।
দক্ষিণ ভারতীয় এই সুপারস্টারদের তালিকায় হয়তো একটা নামের থাকার কথা ছিল তিনি নিশা নুর। তবে দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার জগতের নিমজ্জিত হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর গল্প অনেকটাই মেলে সিল্ক স্মিতার জীবনের সঙ্গে। বিদ্যা বালান অভিনীত ডার্টি পিকচার ছবিতে সিল্ক স্মিতার জীবনী আমরা দেখেছি। কিন্তু না নিশা নুরের কোন জীবনই আমরা কখনই দেখিনি বা ভবিষ্যতে দেখব এমনটা আশা করা যায় না।
মাত্র এগারোটা ছবিতে কাজ করেছিলেন এই অভিনেত্রী। ইন্ডাস্ট্রির ‘নূর’ হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ ক্ষমতা, প্রতিভা ছিল তাঁর মধ্যে। তাঁর শারীরিক আবেদনে ঘায়েল হতো দর্শক পুরুষরা। ‘টিক টিক টিক’, ‘কল্যাণ আগাথিগল’, ‘আইয়ার দ্য গ্রেট’-এর মতো জনপ্রিয় সব দক্ষিণ ভারতীয় ছবির মুখ ছিলেন নিশা। কিন্তু অর্থলোভ আর ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার জগত তাঁকে সাফল্যের রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ছিল।
জানা যায়, দক্ষিণের এক জনপ্রিয় প্রযোজক নিশাকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বলেন, যৌ’নকর্মীর পেশায় নামলে প্রচুর টাকা পাবেন তিনি। ততদিনে হাতে সিনেমার কাজ কমছে নিশার। প্রযোজকের কথায় অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়ান তিনি। এরপর নিশা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেই গোপনে পতিতাবৃত্তির কাজ করা শুরু করেন। জানা যায়, একটাসময় ইন্ডাস্ট্রির বহু অভিনেতার সঙ্গেই গোপনে শা’রীরিক সম্পর্ক ছিল নিশার, যা তাঁকে টাকার পাশাপাশি এইডস-এর মতো যৌ’ন অসুখ ধরিয়ে দিয়ে যায়।
নিশার শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের, বেদনাদায়ক। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে শেষ হয়ে যায় এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর জীবন। তাঁর শেষ বয়সে তাঁকে কেউ চিনতে পারত না। এক দরগার বাইরে কঙ্কালসার চেহারায় ভিক্ষারত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল এই অভিনেত্রীকে। সারা শরীরে বিভিন্ন পোকা, পিঁপড়েতে ছেয়ে গেছে। তাঁকে চিনতে পেরে মানুষজন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও এইডসের মতো যৌ’ন অসুখের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারেননি নিশা। ২৩ শে এপ্রিল ২০০৭ সালে চেন্নাইয়ের তাম্বারামে মৃত্যু হয় ভারতীয় সিনে দুনিয়ার এই নুরের।