সময়টা ১৯৭৫ -এর অগস্ট মাস, বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে এ এক বিশেষ দিন! সেদিনই প্রথমবার কলকাতা দূরদর্শনের (Doordarshan Bangla) সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। সেই সময় আকাশবাণী ছিল বিনোদনের প্রধান মাধ্যম, কিন্তু নতুন এই সংযোজন যেন এক বিস্ময়ের জানালা খুলে দিল মানুষের সামনে। পাড়ায় একটি বাড়িতে যদি টেলিভিশন থাকত, তবে আশপাশের সবাই সেখানে ভিড় জমাত একসঙ্গে অনুষ্ঠান দেখার জন্য। শুধু বিনোদন নয়, কলকাতা দূরদর্শন মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছিল শিক্ষামূলক ও তথ্যসমৃদ্ধ অনুষ্ঠানও, যা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
এই নতুন মাধ্যমের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন দুই সুললিত কণ্ঠস্বরের অধিকারী ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ নারী— ‘চৈতালি দাশগুপ্ত’ (Chaitali Dasgupta) এবং শাশ্বতী গুহঠাকুরতা। তাঁদের সঞ্চালনার ভঙ্গি ও মার্জিত উপস্থাপনায় গড়ে উঠেছিল এক অনন্য মানদণ্ড। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আজও সেই স্মৃতি বয়ে বেড়ান চৈতালি দাশগুপ্ত। সম্প্রতি দূরদর্শনের ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি ফিরে গেলেন অতীতের সোনালি দিনে, জানালেন তখনকার গল্প ও অভিজ্ঞতা।
তবে নস্টালজিয়ার ভিড়েই লুকিয়ে ছিল এক আক্ষেপের সুর। চৈতালি দাশগুপ্ত মনে করেন, দূরদর্শন তাঁর কাছে শুধু কর্মস্থল নয়, ছিল নিজের ঘরের মতো। অথচ সেই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটির জন্মদিনে তিনি পাননি প্রত্যাশিত সম্মান বা যথাযথ স্বীকৃতি। এই উপেক্ষা তাঁর মনকে কষ্ট দিয়েছে। তবুও তিনি কৃতজ্ঞ সেই দিনের জন্য, যেদিন এই মঞ্চ তাঁকে সবার সামনে পরিচিত করে তুলেছিল। বর্তমান প্রজন্মের সংবাদ উপস্থাপকদের নিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন স্পষ্ট অসন্তোষ।
তাঁর মতে, আজকের নিউজ রিডারদের ভঙ্গিমায় অতিরিক্ত উদ্ধত ভাব লক্ষ্য করা যায়। খবর পড়া ছাড়াও প্রায়ই বিশ্লেষণ যুক্ত হয়, আর সেই সঙ্গে থাকে এক ধরনের অহংকারপূর্ণ সুর, যা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন, সংবাদ উপস্থাপনায় বিনয় ও নম্রতা অপরিহার্য, কারণ ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো মানেই দর্শকের কাছে একটি ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করা। ওনার কথায়, “এখনকার নিউজ রিডারদের নিউজ বলার ভঙ্গিটা খুব উদ্ধত।
শুধু নিউজ রিড করা হয় না, নিউজ অ্যানালিসিসও করা হয় এবং আজকাল ভঙ্গিটা খুব উদ্ধত। প্রথম থেকেই আমরা জানি খুব নম্র ভঙ্গিতে কথা বলতে হয়, এমনিতেই যদি ক্যামেরার বাইরে দুজন মানুষ কথা বলে, সে ক্ষেত্রেও নম্রতা বজায় রাখা উচিত। তার উপর যখন কেউ ক্যামেরায় কথা বলছে, তখন সে একটা দৃষ্টান্ত প্রতীক্ষা করছে, কাজেই তখন নম্র এবং বিনয়ী হয়েই কথা বলতে হবে। কিন্তু আজকাল ঠিক উল্টোটাই হচ্ছে, আমার একদম পছন্দ নয় এবং আমি দেখিও না খবরের চ্যানেল।
আরও পড়ুনঃ “শরীরটা আর দিচ্ছে না…দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছি না, তবু মনটা টানছে…খুব ইচ্ছে করছে বৃন্দাবন যেতে!”— জন্মাষ্টমীতে মন খারাপ গোপাল ভক্ত ‘মিঠাই’ ওরফে সৌমিতৃষার! ভক্তির আবেগে না পারার আক্ষেপ নিয়ে কষ্টের কথা জানালেন অভিনেত্রী!
আমি শুধু মোবাইলে পড়ে নিই খবর, নিউজ চ্যানেল চালালেই আমার শরীর খারাপ লাগে।” এই কারণে আজকাল তিনি সংবাদ চ্যানেল এড়িয়ে চলেন। চৈতালি জানান, দেশ-দুনিয়ার খবর জানার প্রয়োজন হলে তিনি পড়ে নেন, কিন্তু টিভিতে নিউজ চালালে তাঁর অস্বস্তি হয়। পঞ্চাশ বছরের দূরদর্শনের যাত্রাপথের সাক্ষী থেকেও তিনি তাই বর্তমানের সংবাদ পরিবেশে খুঁজে পান না সেই সৌজন্য ও শালীনতা, যা একসময় এই মাধ্যমের গর্ব ছিল।