করোনা অতিমারি পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতার যেমন প্রশ্ন চিহ্ন এনে দিয়েছে, তেমনি বহু মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের রুটি-রুজির ন্যূনতম সম্বল টুকু হারিয়ে ফেলেছেন। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন নতুন জীবিকার পথ। সমাজে মহিলারা বরাবরই যখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কাছে মাথানত করেছে, সেখানে দিনবদলের ডাক দিয়েছেন নতুন নতুন কাজের মাধ্যমে। এমনই এক গল্প উঠে এলো শিক্ষিকা থেকে মোমো বিক্রেতা সোমার জীবনে।
পেশায় তিনি ছিলেন ড্রইং শিক্ষিকা। একসাথে সাত আটটি ব্যাচ করতেন নিয়মিত ভাবে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম করে করে নিজেই গড়ে তুলেছিলেন তার সেই আঁকা স্কুলের গ্রুপ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই যখন স্কুল কলেজ বন্ধ, মানুষের রোজগার কমছে সেখানে সব ছাত্র ছাত্রীরা আঁকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। ছোটো থেকেই নিজের উপার্জন নিজেই করেন সোমা। কিন্তু আঁকা স্কুল বন্ধ হওয়ায় সেই উপায় বন্ধ।
কিন্তু কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই হাল ছাড়েননি। নিজেকে পরিবারের বোঝা করেননি তিনি। পাড়ার মোড়ে তৈরি হলো মোমো তৈরির দোকান। শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্যিই মাত্র ২০টাকার বিনিময়ে তিন পিস সুস্বাদু মোমো বিক্রি শুরু হলো শ্যামনগর ইছাপুর অঞ্চলের মহিলা সোমা। শুরুতে লড়াই চললেও আসতে আসতে দাড়িয়ে গেছে। প্যান ফ্রাইড মোমো ৬০ টাকা, এবং স্টিম মোমো ২০টাকা। এত কম দামে সুস্বাদু মোমো তৈরির পাশাপাশি জীবনের লড়াইয়ে আরো একবার উঠে দাড়ালো সোমা।
একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে সোমা জানান “ছোট থেকেই নিজের হাত খরচ নিজেই উপার্জন করি আমি। করোনা সময় স্কুল কলেজ বন্ধ হওয়ায় তারা আর আকার প্রতি সেরকম জোর দেবে না, তাই বাধ্য হয়ে করা।” পাশাপাশি সমাজের প্রতি তার বক্তব্য ” বাবা মায়ের টাকায় না করে নিজের পরিশ্রমে উপার্জন করলে তার যে আনন্দ তার কোনো বিকল্প নেই। যদি সেই উপার্জন ১০০ টাকাও হয় সেটা অসাধারণ। এই রোজগার থেকেই উৎসবের সময় তাদের যখন উপহার তুলে দি, তারাও খুশি হয়”।