‘এআই যেভাবে আক্রমণ করছে… কিছুদিন আর শুধু ডাবিং আর্টিস্ট থাকবে, আমাদের আর তো কেউ নেবে না!’ প্রযুক্তির আগ্রাসনে শিল্প-সংস্কৃতি পুরোপুরি বদলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মানসী সিনহা! প্রশ্ন তুললেন মানবশিল্পীর ভবিষ্যৎ নিয়ে!

টলিউডের অত্যন্ত পরিচিত মুখ ‘মানসী সিনহা’ (Manasi Sinha), যার সঙ্গে দর্শকের পরিচয়টা ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে মঞ্চ, টেলিভিশন আর সিনেমার পথে হাঁটতে হাঁটতে। আজ যে জায়গায় শক্ত করে দাঁড় করিয়েছেন নিজেকে, তাঁর অভিনয় দেখলে বোঝা যায় যে কতটা পরিশ্রম আছে তার পেছনে। আর পাঁচজন শিল্পীর মতো বড় হয়ে অভিনয় শেখেননি তিনি, ছোটবেলার সেই অনন্ত মঞ্চচর্চাই (Theater) ছিল তাঁর প্রথম পাঠশালা।

তবু এই দীর্ঘ পথচলার গল্প বলতে গেলে কোথাও যেন অভিনয়ের চেয়ে মানুষের ভেতরের উষ্ণতাটাই বেশি করে ফুটে ওঠে মানসীর ক্ষেত্রে। তাঁর যাত্রাপথে একটা বিষয় বেশ নজর কাড়ে, নিজেকে থামিয়ে না রাখার অভ্যাস। কখনও মঞ্চ, কখনও দৈনন্দিন ধারাবাহিক আবার কখনও বড়পর্দার ছোট অথচ স্মরণীয় চরিত্র, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি নিজের স্বাভাবিক ভাবনাটাই কাজে লাগিয়েছেন। জনপ্রিয় ছবি ‘আলো’তে অভিনয়ের পরও অনেকে তাঁকে শুধু একটি চরিত্রের পরিচয়ে চিনত।

কিন্তু নিজের যোগ্যতায় ধীরে ধীরে সেই ধারণা ভেঙে আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। খ্যাতি বা বড় সুযোগ পাওয়ার লড়াইয়ের চেয়ে কাজের ভেতরের সততাকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এই লড়াইয়ের মাঝেই তাঁর ভেতরে আরও একটা ইচ্ছে তৈরি হয়েছিল, নিজের গল্প নিজের মতো করে বলার। সেই ইচ্ছের ফল ২০২৪ সালে পরিচালকের আত্মপ্রকাশ। প্রথম ছবি তৈরি করার সাহসই যথেষ্ট বড় বিষয়, তার ওপর পরিচিত অভিনেতাদের নিয়ে ছবিটিকে দর্শকের মনে পৌঁছে দেওয়া। এই দিক থেকে মানসীর পথচলা অনেকটাই আলাদা।

তাঁকে ঘিরে তখন নতুন আলোচনার শুরু হয়, নতুন দৃষ্টিতে সবাই দেখতে শুরু করে তাঁর কাজের পরিসরকে। তবু সাফল্যের এই ভিড়ের মধ্যেই মানসী আজকাল একটা দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন! অভিনয় জগতকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের অনেকের মধ্যেই এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, এআই-এর দ্রুত অগ্রগতিতে ভবিষ্যৎ কতটা নিরাপদ? শিল্পকর্মের জায়গায় যদি কণ্ঠস্বর থেকে মুখচ্ছবি, আবেগ সবই নকল হয়ে যেতে পারে, তবে একজন শিল্পীর অস্তিত্বের মানেটা কোথায় দাঁড়ায়?

অভিনয়ের মতো অভিজ্ঞতানির্ভর কাজের জায়গায় প্রযুক্তির আগ্রাসন তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে এবং এই ভাবনাটা যে নিছক আতঙ্ক নয় বরং সময়ের দাবিতেই উঠে আসা বাস্তব প্রশ্ন, তা স্পষ্ট তাঁর কথায়। এই প্রসঙ্গত সম্প্রতি তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এআই যেভাবে আক্রমণ করছে, তাতে আর কিছুদিন বাদে আমাদের কারোর প্রয়োজন হবে না। যা সব দেখছি, গলা থেকে শুরু করে চেহারা, সবই নকল করে নিচ্ছে। তাহলে কয়েকদিন বাদে কি আর আমাদের কেউ নেবে!

আরও পড়ুনঃ মেয়ের নাম নাকি মুসলিম-ঘেঁষা! সমালোচনা সহ্য করেও কেন মেয়ের এমন নাম রাখেন সুদীপ্তা? কেন অভিনেত্রীর কন্যা ব্যবহার করে না বাবা–মায়ের পদবী? কি বিশেষ কারণ লুকিয়ে আছে এর পিছনে?

হয়তো কিছুদিন ডাবিং আর্টিস্ট থাকবো, তারপর গলাটাও নকল করে নেবে। কিন্তু জীবনটার এআই কিছু করতে পারবে না, ওটা যেমন জায়গায় আছে তেমনই থাকবে।” তাঁর এই কথায় অভিযোগের চেয়ে ভয় বেশি, শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার আর মানুষের ভেতরের সত্তাকে হারিয়ে ফেলতে না দেওয়ার ভয়। এই কারণেই প্রযুক্তিনির্ভর সময়েও মানসীর মতো শিল্পীরা আমাদের মনে করিয়ে দেন, শেষমেষ শিল্প মানে মানুষ আর সেই মানুষটাকে নকল করা যায় না।