টলিউডের অভিনেত্রী ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar) আবারও একবার আলোচনার কেন্দ্রে। সমাজ মাধ্যমে বহুবার তাঁর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তবে এবার যে কথাগুলো নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দু কর্মজীবী মহিলারা (Working Women)! দীর্ঘদিন ধরেই নারীদের পোশাক, আচরণ ও জীবনযাপন নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন। সেই পুরোনো ক্ষত না শুকোতেই সম্প্রতি তিনি জানালেন, সংসার সামলানো নাকি বাইরে গিয়ে কাজ করার থেকে অনেক বেশি কঠিন আর এখনকার মেয়েরা সেই ধৈর্যই নাকি রাখতে চান না।
মন্তব্যটি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মমতা শঙ্কর বলেন যে আজকাল সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাচ্ছে মানুষ। ফলে যে ধৈর্য ধরে কোনও কিছু করার বা পাওয়ার আনন্দ, সেটা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সবাই। এখন আর একান্নবর্তী পরিবার নেই, এই নিয়েও তিনি আক্ষেপ করেন। মানুষ এখন খুব আত্মসুখী হয়ে উঠেছে, নিজের ছাড়া তাঁরা কিছুই বোঝে না বলেই পরিবারগুলো ভাঙতে বসেছে, এমনটাই মত তাঁর। তিনি আরও বলেন, “আগেকার দিনে একান্নবর্তী পরিবারে, মা কাকিমারা মিলে সংসারটাকে সামলাতে।
যে যেমন কাজে পারদর্শী, সে সেই কাজই করতেন। সত্যি বলতে আমার মতে, একটা সংসারকে ভালো করে সামলানোর থেকে মেয়েদের বাইরে গিয়ে কাজ করা অনেক সহজ। তিল তিল করে একটা সংসারকে নিজের হাতে গড়ে তোলা, মোটেও মুখের কথা নয়। সেটা করতে হলে সময় বা ধৈর্য দুটোই লাগে।” মমতা শঙ্করের মতে, আগে পরিবারে মিলেমিশে কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া হতো, এতে সংসারও চলত আর সম্পর্কও টেকসই থাকত। এখন মানুষ নাকি এতই নিজের স্বার্থে ডুবে গেছে যে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।
তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকেই অনেকে পুরোনো যুগের ছাঁচে আটকানো বলে কটাক্ষ করেছেন। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, “যে সমাজে এখন নারীরা আয়ের বড় অংশ সামলান, সেখানে ‘ধৈর্যের অভাব’ বলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?” এটাই প্রথম নয়। উল্লেখ্য, গত বছর নারীদের পোশাক নিয়ে তাঁর মন্তব্য ঝড় তুলেছিল। শুধু তাই নয়, নারীদের আচরণ তুলনা করেছিলেন রাস্তাঘাটের অপমানজনক চিত্রের সঙ্গে। সেই মন্তব্যের পর সমালোচনার পরিমাণ এতটাই বেড়েছিল যে অনেকেই তাঁকে নারীবিদ্বেষী বলেও দাবি করেন।
পরে স্যানিটারি প্যাড নিয়ে তাঁর বক্তব্য আবারও নতুন করে বিতর্ক বাড়িয়েছিল। ফলে তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য অনেকের কাছেই যেন সেই পুরোনো মনোভাবেরই পুনরাবৃত্তি। তবে এবার বিরোধের সবচেয়ে বড় সুর উঠেছে কর্মজীবী মহিলাদের মধ্য থেকেই। তাঁদের কথায়, মেয়েরা অফিসের কাজ করলেই সংসারের দায়িত্ব ভুলে যায়, এই ধারণা প্রচার করা খুবই অন্যায়! কেউ কেউ বলেছেন, ‘ঘরের কাজ, সন্তানের দায়িত্ব আর আর্থিক চাপ মিলিয়ে দিনের শেষে ক্লান্তি কাকে বলে, সেটা সবচেয়ে ভালো কর্মজীবী নারীরাই বোঝেন!’
আরও পড়ুনঃ ডিভোর্সের গুঞ্জন উড়িয়ে একসঙ্গে পাঁচ বছর পার! গৌরবকে নিয়ে বিবাহবার্ষিকী রসিক পোস্টে মাতলেন দেবলীনা
তাঁরা আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রায়ই নারীরাই অফিস থেকে হাফ-ডে বা ফুল-ডে ছুটি নিয়ে পরিবারের কাজ সেরে নেন, অথচ সেই ত্যাগ নিয়ে কেউ কথা বলেন না! তাই ‘সহজ কাজ’ বলা তাঁদের কাছে নিছক বিদ্রূপের মতো। এই সমস্ত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার হচ্ছে, সমাজ বদলাচ্ছে দ্রুত কিন্তু সেই বদলে যাওয়া বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না অনেকেই। মমতা শঙ্করের মতো প্রবীণ শিল্পীরা তাঁদের অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে কথা বললেও, কর্মরতা নারীরা বলছেন যে বাস্তবতা আর আবেগের দূরত্ব আজ অনেক।






