আজ অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যা চিত্র ধরা দিল, তা কোনও আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকার সফরের সঙ্গে কখনওই মানানসই ছিল না! মেসির কলকাতা আগমন (Messi Kolkata Visit) ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তা শুরুতেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গ্যালারির ভিড় সামলানো তো দূরের কথা, একপর্যায়ে মাঠেই ঢুকে পড়েন দর্শকদের একাংশ। নিরাপত্তার অনুরোধ, বারবার মাইকের ঘোষণা, কিছুই কাজে আসেনি। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই অল্প সময়ের জন্য মাঠে উপস্থিত ছিলেন মেসি, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে দ্রুতই তাঁকে বেরিয়ে যেতে হয়। একজন বিশ্বমানের ফুটবলারের সামনে এমন দৃশ্য যে লজ্জার, তা নিয়ে আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই!
যদিও, এই ঘটনার পরের অধ্যায় আরও অস্বস্তিকর। মেসি মাঠ ছাড়ার পর ক্ষোভ যেন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। জলের বোতল ছোড়া থেকে চেয়ার ভাঙা, ক্যানোপি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, গোলপোস্ট ভেঙে দেওয়া মিলিয়ে যুবভারতী কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়! কেউ মাঠে নেমে সেলফি তুলছেন, কেউ আবার ঘাসে শুয়ে পড়ছেন। এই গোটা ঘটনার দায় কার? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ যাঁরা হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই প্রিয় খেলোয়াড়কে ঠিকভাবে দেখার সুযোগই পাননি!
এই আবহেই সমাজ মাধ্যমে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। তিনি লেখেন, “জল ভর্তি বোতল এলাও করাই উচিত নয় মাঠে!” এই এক লাইনের মন্তব্যই যেন নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। কারণ অনেকের কাছেই এই বক্তব্য সমস্যার গভীরে না গিয়ে কেবল উপসর্গ নিয়ে কথা বলার মতো শোনায়। মাঠে বোতল ঢোকানো নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু এদিন যে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ অন্য জায়গায় ছিল, তা অনেকেই মনে করিয়ে দিতে ছাড়েননি!
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়ায় তাই উঠে আসে তীব্র কটাক্ষ। কেউ সরাসরি লেখেন, “আর যে নেতা মন্ত্রী আর তাদের সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে ৫০০ জনের মতন মেসিকে ঘিরে ধরেছিল তাদেরও অ্যালাও করা উচিৎ হয়নি মাঠের মধ্যে। ১০০০০ টাকা টিকিট কেটে মানুষ মেসিকে দেখতে গিয়েছিল, নেতা মন্ত্রীদের না!” আবার কেউ প্রশ্ন তোলেন, “কোনোদিন গেছেন মাঠে এর আগে? পলিটিশিয়ানদেরও অ্যালাউ করা উচিত নয় মাঠে!” এই মন্তব্যগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে, সাধারণ দর্শকরা সমস্যার দায় একপেশে ভাবে চাপিয়ে দেওয়াকে মানতে নারাজ।
আরও পড়ুনঃ “প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীদের রক্তজল করা অর্থের টিকিটে প্রতিপত্তিশালীরা আসল গুড় খেলেন…মেসির কাছে নয়, আগে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চান!” বাংলা আজ সারা বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র, যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের!
সবচেয়ে কড়া ভাষার প্রতিক্রিয়াও এসেছে রূপাঞ্জনার দিকেই তাক করে। এক নেটিজেন লিখেছেন, “ঠিকই বলেছেন আপনি, যেমন আপনাদের হ্যাংলা মন্ত্রী আর তাঁদের সঙ্গীসাথীদেরও এলাও করা উচিত ছিলোনা!” এই ধরনের মন্তব্যে ভরে গিয়েছে তাঁর সমাজ মাধ্যমের কমেন্ট বক্স। উল্লেখ্য, ক্ষোভ কেবল বিশৃঙ্খলা নিয়ে নয় বরং ক্ষমতার প্রদর্শন আর ভিআইপি সংস্কৃতির বিরুদ্ধেই বেশি। মেসির সফর শেষ পর্যন্ত কলকাতা ফুটবলের গর্বের অধ্যায় হয়ে উঠল না, বরং রয়ে গেল প্রশ্ন! দায় এড়ানোর এই প্রবণতা আর কতদিন চলবে?






