চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন দুনিয়ার এক অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান অভিনেতা ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee)। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বহু ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন। টেলিভিশনের ‘এক আকাশের নিচে’ থেকে বড় পর্দার ‘কাহানি’ আর ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’—তার অভিনয়ের পরিধি সবসময়ই প্রশংসিত হয়েছে। নিজের সহজ-সরল অভিনয়, সংলাপ বলার ভঙ্গি এবং চরিত্রের গভীরতায় তিনি বহু মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় বাংলা ও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি জানান, বাংলার ইন্ডাস্ট্রিতে বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত সাফল্যের দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সামগ্রিক ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির দিকে সবাই নজর রাখেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি এক অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে একবার শুটিংয়ের সময় হঠাৎ চিৎকার ও উল্লাস শুনে তিনি দেখতে পান,
‘আরআরআর’ সিনেমার ‘নাটু নাটু’ গানটি অস্কার জেতায় অন্য প্রোডাকশন হাউসের লোকেরাও আনন্দে মেতে উঠেছেন, এমন উদাহরণ বাংলায় বিরল। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা এতটাই প্রবল যে, একবার এক ছবির ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার দিন অন্য একটি সিনেমার শুটিং বন্ধ করে বড় পর্দা টাঙিয়ে সেই ট্রেলার দেখানো হয়েছিল। এই সহযোগিতা ও সম্মিলিত উদযাপন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায় না বলেই তিনি মনে করেন।
এছাড়াও, তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের অনেক অভিনেতা নিজেদের স্টারডম ধরে রাখতে সবদিকেই হাত বাড়াচ্ছেন, কিন্তু এতে দীর্ঘস্থায়ী কেরিয়ার তৈরি হচ্ছে না। সাময়িক সাফল্য এলেও তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় তার পারিবারিক শিষ্টাচার ও শিক্ষা নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, তার বাবা ও ঠাকুরদা কখনোই বাড়াবাড়ি রকমের বিলাসিতা বা বড়াই করেননি, বরং সঞ্চয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।
তাই তিনি নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আগে নিজেকে আর্থিকভাবে নিরাপদ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে বাজে বা অনিচ্ছাকৃত কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে না হয়। একজন অভিনেতার জন্য ‘না’ বলার ক্ষমতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে নিজের প্রথম গাড়ি হিসেবে তিনি একটি অল্টো কিনেছিলেন, যা ২০১৩ সাল পর্যন্ত চালিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ “সন্ধ্যা রায়ের ঈর্ষার শিকার হয়েছি, আমার হাড়গোড় ভেঙে দিয়েছিলেন যাতে নায়িকা না হতে পারি!” সন্ধ্যা রায়ের বিরুদ্ধে অনামিকার সাহার চাঞ্চল্যকর দাবি!
অনেকেই তাকে এই নিয়ে মজা করেছেন বা কটাক্ষ করেছেন, কিন্তু তাতে তিনি কখনোই বিচলিত হননি। তার মতে, গ্ল্যামার ও লুক নয়, একজন অভিনেতার প্রকৃত শক্তি তার কাজের মানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এই বিশ্বাসেই তিনি নিজের অভিনয় জীবনকে গড়ে তুলেছেন এবং আজও তিনি একই নীতিতে চলেন।