নায়ক থেকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, যতটাই রঙিন ছিল অভিনয় জীবনে, ততটাই বিতর্কিত শেষ জীবন! ট্র্যাজিক হিরো তাপস পাল

ভারতের সিনেমা জগতে তাপস পাল ( Tapas Paul ) ছিলেন এক ভিন্নধারার নায়ক। তথাকথিত সুদর্শন হিরোর সংজ্ঞার বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর সরল-শান্ত চেহারা ও অভিনয় দক্ষতায় জয় করেছিলেন দর্শকদের মন। আশি-নব্বই দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্মগ্রহণ করা এই অভিনেতা মাত্র ২২ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ ছবির মাধ্যমে। এরপর একের পর এক পারিবারিক গল্পের সিনেমায় অভিনয় করে হয়ে ওঠেন বাণিজ্যিকভাবে সফল নায়ক।

তাপস পালের অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ উল্লেখযোগ্য। ‘সাহেব’ ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। বিশেষ করে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। একাধিক হিট ছবি, যেমন—‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, এবং ‘তবু মনে রেখো’ তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের এক অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করে। তাপস পালের অভিনয় দক্ষতা তাঁকে শুধু বাংলা সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ রাখেনি; তিনি হিন্দি সিনেমায়ও কাজ করেছেন, যেখানে তাঁর বিপরীতে ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত ও রাখি গুলজার।

কেন জড়িয়ে পড়লেন বিতর্কের মুখে?

তাপস পালের জীবনের চিত্রনাট্য শুধু সিনেমায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, রাজনীতির মঞ্চেও তিনি এক সময় নিজের অবস্থান তৈরি করেন। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনয়ন নিয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও তাঁর রাজনৈতিক জীবন বিতর্কের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। রোজ ভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া এবং রাজনৈতিক বক্তৃতায় বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা ধাক্কা খায়। সিবিআই হেফাজতে বন্দী থাকার ঘটনাও তাঁর জীবনের গতি পাল্টে দেয়। ভক্তদের অনেকেই মনে করেন, ‘দাদার কীর্তি’র সেই সাদাসিধে ভালো ছেলেটির ভাবমূর্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর শেষ জীবন ছিল একরকম দুর্ভাগ্যের অধ্যায়। বিতর্কে জড়িয়ে জনপ্রিয়তার শিখর থেকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকেন তিনি। তাপস পালের জীবন ও কর্ম নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তাপস পাল রাজনীতির লোক ছিলেন না। তাঁর জনপ্রিয়তাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়েছিল।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর মতে, “অসময়ে, কষ্টদায়কভাবে তাপসকে বিদায় নিতে হলো। রাজনীতির শিকার হোক আর নিজের দোষে হোক, শেষটা তাঁর ভালো হয়নি।”

আরও পড়ুন: আগে ইন্ডাস্ট্রিটা একান্নবর্তী পরিবার ছিল, এখন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অধঃপতন দেখলে ক’ষ্ট হয়! অকপট দেবশ্রী রায়

২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাপস পাল মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। অভিনয়ের চেনা জগতে ফিরতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

You cannot copy content of this page