“টেলিভিশনে লেখকরাই এখন গল্প লেখেন, প্রযোজনা করেন এবং সহকারীদের পরিচালক বানায়!”— কাজের খরা, পেট চালাতে অভিনয় করছেন পরিচালক অনিন্দ্য সরকার! বয়স বেড়েছে, তাই কাজ বন্ধ!

এক সময় পরিচালনার জগতে যাঁর নাম মানেই ছিল নির্ভরতা, আজ তিনিই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন আলো থেকে। পরিচালক ‘অনিন্দ্য সরকার’ (Anindya Sarkar) , যিনি–‘শ্রীরামকৃষ্ণ’, ‘চেকমেট’, ‘তৃষ্ণা’-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের নির্মাতা। তবে বর্তমানে আর সেই অনিন্দ্য পরিচালকের আসনে নেই, বরং কাজের খোঁজে এবার নিজেই ক্যামেরার সামনে! ঠিক যেমনটা কিছুদিন আগে করেছিলেন পরিচালক-অভিনেতা অয়ন সেনগুপ্ত।

শিল্পীমনস্ক অনিন্দ্য আজ হাল না ছেড়ে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অভিনেতা হিসেবে। কেন এই হঠাৎ পরিবর্তন? অনিন্দ্যের কথায়, তাঁর বয়সকে কারণ দেখিয়ে তাঁকে কাজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন প্রযোজক-লেখকদের একটি অংশ। তাঁর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সব ছাপিয়ে শুধুমাত্র “তুমি আর পারবে না” এই তকমা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর কাঁধে। অথচ অনিন্দ্য মনে করেন, এখনও তাঁর পরিচালনার হাত যথেষ্ট দৃঢ়, অনুভব স্পষ্ট।

কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়াই হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে অনিন্দ্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরেছেন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনের চিত্র। আগেকার দিনে পরিচালক ছিলেন ধারাবাহিকের মূল চালিকাশক্তি। আর আজ লেখকরাই হয়ে উঠেছেন প্রযোজক, পরিচালক বাছাইয়ের ক্ষমতাও তাঁদের হাতে। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী কিংবা সুশান্ত দাস—সবাই নিজেরাই গল্প লেখেন, প্রযোজনা করেন এবং নিজের সহকারীদের বসান পরিচালকের চেয়ারে।

ফলে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিকে গড়ে তুলেছেন, তাঁদের জায়গা ক্রমশ সঙ্কুচিত। অনিন্দ্যর আক্ষেপ, একসময় যাঁরা দর্শকদের ছোটপর্দার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন, আজ তাঁরাই ব্রাত্য! নতুনদের সুযোগ দেওয়া ভাল, কিন্তু তার মানে এই নয় যে অভিজ্ঞদের ছেঁটে ফেলা হবে। তিনি নিজেও সহকারীদের পরিচালনায় কাজ করছেন, অভিনয় করছেন। কিন্তু কোথাও যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। পরিচালকের মতো নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা নেই সেখানে।

আরও পড়ুনঃ অচেনা ফোনে ভরসা করে সর্বস্ব খোয়ালেন রাহুল! চালাক থেকেও বোকা হলেন অভিনেতা! নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাইবার প্র’তা’রণার নিয়ে সতর্কবার্তা রাহুলের!

আর তাই তিনি এখন আর কারোর কাজে পরামর্শও দেন না—কারণ নতুন প্রজন্ম বড়দের কথা শুনতে চায় না বলেই বিশ্বাস তাঁর। তাঁর চোখে প্রশ্ন—“আমার মতো অভিজ্ঞদের কি শুধু সিনিয়র তকমা দিয়েই সরিয়ে দেওয়া যায়?” এই পরিস্থিতিতে অনিন্দ্য যেন এক অসহায় যোদ্ধা, যিনি অভিনয় করছেন শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু মনে রয়ে গেছে পরিচালনার প্রতি ভালোবাসা, আর ফেলে আসা দিনগুলির তীব্র অভাব।