জি বাংলায় সদ্য মুক্তি পেয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘কুসুম’ (Kusum) এর ঝলক। সেখানে যে চরিত্রটি সবচেয়ে নজর কেড়েছে তা হলো, অভিনেত্রী ‘অঞ্জনা বসু’ (Anjana Basu) ওরফে ইন্দ্রানী গাঙ্গুলির। টলিপাড়ার ভীষণ পরিচিত মুখ অঞ্জনা বসু। অভিজাত নারী, রাশভারী মা কিংবা কঠোর শাশুড়ি—এইসব ভূমিকায় বরাবরই দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলেছেন তিনি। কিন্তু এই অভিনেত্রীর মুখোশের আড়ালেও ছিল এক নারীর অসহায় যন্ত্রণা, যাঁকে কাজ পাওয়ার বিনিময়ে শুনতে হয়েছে অপমানজনক কুপ্রস্তাবও!
অভিনয় জীবনের একদম শুরুতেই এমন অভিজ্ঞতা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না, আর সেটাই এবার অকপটে জানালেন অভিনেত্রী। স্মৃতির পাতা থেকে খুঁজে বললেন, একবার এক জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রামকৃষ্ণ ও সারদা’ তে কাজ নিশ্চিত হওয়ার পর এক্সিকিউটিভ প্রযোজক তাঁকে সরাসরি বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে একরাত না কাটালে ধারাবাহিক থেকে বাদ পড়তে হবে। এমন প্রস্তাবে আঁতকে উঠলেও অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, “কোনও আপোস তিনি করবেন না।”
যদি চরিত্র হাতছাড়াও হয়, তবুও নিজেকে বিকিয়ে দিতে রাজি নন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে রামকৃষ্ণ ও সারদা ধারাবাহিক থেকে বাদ দেওয়া হয়নি, কারণ পরিচালকের সিদ্ধান্তেই তিনি আগেই মনোনীত হয়েছিলেন। তবে সেই ঘটনায় এতটাই ভেঙে পড়েন যে সারা রাত ছেলেকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন অঞ্জনা, দিনের পর দিন আতঙ্কে কেটেছে তাঁর শুটিং স্পটে। গ্রীন রুমের দরজা বন্ধ করে রাখতেন সবসময়ই।
তিনি সেই প্রযোজকের সঙ্গে আর কোনও দিনও কাজ করেননি, কিন্তু বহুদিন পর এক বিজ্ঞাপনের জন্য দ্বিগুণ পারিশ্রমিকের বিনিময় কাজ করতে রাজি হন তিনি। কেন নিয়েছিলেন ওই ব্যাক্তির প্রস্তাব ? জানতে চাওয়া হলে অভিনেত্রী বলেন, “প্রমাণ করার জন্য যে, সম্মান নিয়ে বাঁচা যায়, সম্মান নিয়ে কাজ পাওয়াও যায়, তার জন্য শরীর বিক্রি করতে হয় না!” সেইদিন নিজের ক্ষত মেটাতে ওই পারিশ্রমিকের টাকাই তিনি সারা বিছানায় ছড়িয়ে ঘুমিয়েছিলেন।
এই ধরনের ঘটনা একবার নয়, একাধিকবার ঘটেছে তাঁর সঙ্গে। এদিন একটি সাক্ষাৎকারে এমনই এক ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি, জানালেন এক প্রবীণ ও খ্যাতনামা বাঙালি পরিচালকও তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন, ছবির ঘোষণা হওয়ার পরেই অফিসে গিয়ে ব্যক্তিগত সময় কাটানোর দাবি ছিল সেই পরিচালকের। সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে ইন্ডাস্ট্রির অনেক অভিনেত্রীরাই নাকি এটা করে থাকেন তাঁদের কাজ বাঁচাতে।
আরও পড়ুনঃ জগদ্ধাত্রীর কামাল! টিআরপি তালিকায় এবারও শীর্ষস্থানে ‘জগদ্ধাত্রী’! গতি হারালো গীতা! জলসার মান রাখলো রাঙামতি
এই প্রস্তাবের পর অঞ্জনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, নামী অভিনেত্রীরা সেই পথে হাঁটলেও তিনি যাচ্ছেন না। তাতে কাজ হাতছাড়া হলেও আপত্তি নেই, কিন্তু আত্মসম্মান কখনও বিক্রি হবে না। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও এই সাহসী স্বীকারোক্তি টলিউডের অন্ধকার দিকের প্রতিফলন। যেখানে একজন অভিনেত্রীকে বারবার প্রমাণ করতে হয়, তিনি কেবল প্রতিভা দিয়েই নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। অঞ্জনা বসুর গল্প কেবল তাঁর একার নয়, বহু নারীর বাস্তব চিত্র।