রিয়্যালিটি শো মানেই বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি—এমনটাই ধারণা ছিল একসময়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শো-গুলোতে প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহারে বাস্তবতা প্রায় হারিয়ে গেছে। শুধু বিনোদনের জন্য, দর্শকদের চোখ ধাঁধানোর জন্য এখন এগুলিকে সাজানো নাটক বানানো হচ্ছে।
বর্তমানে রিয়্যালিটি শো-তে শব্দ ও আলো ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। প্রতিযোগীদের গলার স্বর থেকে শুরু করে পরিবেশনায় খুঁত ঢাকতে ব্যবহৃত হয় অটো টিউন ও এডিটিং সফটওয়্যার। বিচারকদের অভিব্যক্তি থেকে শুরু করে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া—সব কিছুই যেন আগে থেকেই পরিকল্পিত। এই ধরনের “মেকি” মুহূর্তগুলো শুধুমাত্র দর্শক টানার জন্য ব্যবহৃত হয়।
রিয়্যালিটি শো-তে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে এমন আলোচনা নতুন নয়। সম্প্রতি অন্বেষা দত্তগুপ্তের (Anwesha Dattagupta) বক্তব্য এই বিষয়ে সামনে এসেছে। বর্তমান সময়ে রিয়্যালিটি শো-গুলির একটিই সাধারণ অভিযোগ, যা হলো বাস্তবতার ছোঁয়া কমে যাওয়ার। অনেকে মনে করেন যে রিয়্যালিটি শো-তে প্রতিযোগীদের প্রকৃত প্রতিভা দেখানোর বদলে, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নাটক বা কৃত্রিম আবেগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, প্রযুক্তির মাধ্যমে ফলাফল বা দর্শক ভোটে কারচুপি করার অভিযোগও উঠে আসে।
রিয়েলিটি শো থেকে সংগীতজগতে নিজের সফর শুরু করেছিলেন অন্বেষা দত্তগুপ্ত। ২০১৪ সালে সারেগামাপা জিতে শ্রোতাদের নিজের গানের জাদুতে মনোরঞ্জন করেছিলেন তিনি। একাধিক ভাষায় গান গেয়েই থেমে থাকেননি তিনি। এরপরে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। এর মধ্যেই বার বার এসেছিলো অভিনয়ের প্রস্তাব। অবশেষে সাড়া দিলেন অন্বেষা দত্তগুপ্ত। সৌম্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘হামসাজ় দ্য মিউজ়িক’-এ অভিনয়ের সফর শুরু করলেন ‘জ্বলতে দিয়ে’- র গায়িকা।
এদিন একটি সাক্ষাৎকারে নিজের নতুন ছবি নিয়ে অন্বেষাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “প্রস্তাব তো বহু দিন আগে থেকেই ছিল। অবশেষে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন?” যার উত্তরে গায়িকা জানান, “এই ছবিটা সম্পর্কে শুনেই মনে হয়েছিল, সম্পূর্ণ অন্য রকম। অভিনয় সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। তবে এই ছবির সঙ্গে গানের বিশেষ যোগ রয়েছে। গানের জন্যই মানুষ আমাকে চেনেন এবং ভালবাসেন। সেই জন্যই এই ছবির প্রস্তাব আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তবে, শুধু অভিনয় নয়। এই প্রথম কোনও হিন্দি ছবিতে আমি আবহ সঙ্গীত নির্মাণ এবং সঙ্গীত পরিচালনাও করেছি। ‘হামসাজ়’ আমার কাছে বিশেষ।”
আবার এই অটোটিউনের দুনিয়ায় গানের প্রতিভা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা কিরে হয়েছিলো, এখন তো গান অটোটিউন করা হয়। কার প্রতিভা আছে, কার নেই— সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বোঝাই মুশকিল…” এর উত্তরে অন্বেষা জানান, “হ্যাঁ, ভাল ও খারাপের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে সেটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। এখন ভালটা খুঁজে বার করাও শ্রোতার বিশেষ দায়িত্ব। আমি একজন শ্রোতা হিসাবেই বলছি। প্রচারের দাপটে হয়তো একটা ভাল গান চাপা পড়ে গেল। শুনতে পেলে ভালই লাগত। কিন্তু প্রচার নেই বলে শুনতে পেলাম না।”
আরও পড়ুনঃ দুই বোন একসঙ্গে দুই চ্যানেলে জোরদার ভিলেন! দেবাদৃতা নাকি দেবপ্রিয়া খল নায়িকা হিসেবে দর্শকদের বেশি পছন্দের কে?
রিয়্যালিটি শো-গুলোর এই “মেকি বাস্তবতা” কি সত্যিকারের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে পারে? নাকি শুধুই শোয়ের গ্ল্যামার ও টিআরপি বৃদ্ধির হাতিয়ার? এই নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।