টলিউডে (Tollywood) আজ থেকে কিছু দশক আগেও, বড়পর্দার গল্পগুলি ছিল বাস্তব জীবনের এক নিঃশব্দ প্রতিচ্ছবি। সাদামাটা জীবন, পারিবারিক টানাপড়েন, গ্রাম্য প্রেম-এসবই ছিল গল্পের মূল সুর। আলো ঝলমলে সেট বা তারকাখচিত প্রচারের বাহুল্য না থাকলেও, ছবিগুলোতে ছিল একধরনের আত্মার ছোঁয়া। সেই সময়কার বাণিজ্যিক ছবিগুলোর খুব সাধারণ গল্প হলেও প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করত মানুষ। আজ যখন প্রচারের জন্য সমাজ মাধ্যমের দুনিয়া চষে ফেলা হয়, তখন অতীতের সেই বিনা প্রচারে হিট হওয়া ছবির কথা আরও বেশি করে মনে পড়ে।
টলিউডের সেই স্বর্ণযুগের সাক্ষীরা আজ অনেকেই বড়পর্দা থেকে দূরে, এদের মধ্যে অঞ্জন কন্যা ‘চুমকি চৌধুরী’ও (Chumki Choudhury) একজন। তাঁর মতো অনেক অভিনেত্রী তখনকার প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছিলেন অভিনয় দিয়ে। এমন না যে সেই সময়ে স্টারডম ছিল না, তবে সেটার প্রকাশ ছিল অনেক বেশি সংযত। চুমকি মনে করেন, তাঁর চলচ্চিত্র যাত্রার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তাঁর বাবা, অর্থাৎ পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর। তিনি এমন সব গল্প তৈরি করেছিলেন, যা মানুষের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল।
প্রচার ছাড়াই সেইসব ছবির শো হাউজফুল হতো। ছবিগুলি ‘গল্প’ দিয়েই দর্শককে বেঁধে রেখেছিল। আজও যদি তেমন গল্প বানানো যায়, মানুষের ভালোবাসা ফিরে পাওয়া অসম্ভব নয়-এই বিশ্বাস আজও তাঁর। চুমকি মনে করেন, তাঁর বাবা বেঁচে থাকলে কখনওই টলিউডের এমন ধ্বস নামতে দিতেন না। উনিই পারতেন গল্পের জোরে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে ছবির বাজেট, প্রোমোশন, প্রেজেন্টেশন -সব কিছুতেই চলছে জোর প্রতিযোগিতা। যেভাবে বড় বাজেটের ছবিগুলোর প্রচারে তারকারা ছুটে বেড়াচ্ছেন,
তা একধরনের ‘দেখিয়ে দেওয়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই মত চুমকির। আবার সেই তুলনায় দেখা যাচ্ছে, বহু সিনেমা মুক্তির আগেই হারিয়ে যাচ্ছে জনচেতনার আড়ালে। এই জায়গায় দাঁড়িয়েও চুমকি মনে করিয়ে দিয়েছেন, একটা সময় মানুষ গল্প দেখতে প্রেক্ষাগৃহে গেলেও, এখন ‘দেখতে যাওয়ার’ কারণটা অনেক সময়েই হয়ে দাঁড়ায় ‘দেখানোর’ তাগিদ। তবে সময় তো বদলাবেই। প্রযুক্তি যেমন বদলেছে, তেমনই বদলেছে মানুষের বিনোদনের ধরন। ওটিটি এসেছে, স্মার্টফোন এসেছে, মানুষের হাতে এখন অসংখ্য বিকল্প। ফলে দর্শক ধরে রাখার লড়াইটাও আগের চেয়ে কঠিন।
আরও পড়ুনঃ ১৯৭৬-এর একটা ভুল সিদ্ধান্ত, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ঐতিহ্যের কাছে হার মেনেছিল মহানায়কের জনপ্রিয়তাও! শ্রোতাদের চাপে নতি স্বীকার, আকাশবাণীতে ফিরল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’! কেন ব্যর্থ হয়েছিল উত্তম কুমারের ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’?
আজ আর কেউ অপেক্ষা করে না সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবে বলে। একটা ক্লিকেই হাজির হয়ে যায় শত শত গল্পের ভাণ্ডার। চুমকি নিজেও স্বীকার করেন, এখনকার দিনে ছবি হিট করাতে গেলে নির্মাণের চেয়ে প্রচারের গুরুত্ব প্রায় সমান। আজও যদি কেউ দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের গল্প নিয়ে ছবি তৈরি করেন, তাহলে দর্শক তা দেখবেই। ‘প্রজাপতি’র মতো পারিবারিক ছবি আজও মানুষ হলে গিয়ে দেখেছে। গল্প যদি হৃদয় ছোঁয়, নির্মাণ যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়-তাহলে তাকে গ্রহণ করার মন, এখনও হারিয়ে যায়নি। হয়তো সেই সহজ সময়টা আর আসবে না, কিন্তু ভালো কনটেন্টের চাহিদা কখনও ফুরোবে না।