বাঙালির রুপোলি পর্দার ম্যাটিনি তখনও তাঁকে ঘিরে ছিল আর এখনও তাঁর ছায়ায় লালিত। আজও বাঙালির হার্টথ্রব তিনিই। কেউ বলে মহানায়ক কেউ বলে উত্তম কুমার আর এভাবেই তিনি মহান হয়ে উঠেছেন।
উত্তম কুমারকে নিয়ে বাঙালির মনে আবেগ এবং শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এদিকে সেই নায়কের প্রথম সাতটি ছবি পরপর ফ্লপ। দৃষ্টিদান থেকে সঞ্জীবনী অবধি পরপর সাতটি ছবি রং জমাতে পারল না বক্স অফিসে।
নির্মল দে তাঁকে দিলেন নতুন সুযোগ। বসু পরিবারে অভিনয়ের মাধ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়ালেন উত্তম কুমার ওরফে অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এই নাম এই ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পায়ের নিচে জমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকতে হয়েছে উত্তম কুমারকে।যতই নাম পেতে লাগলেন ততই জুড়তে লাগলো একের পর এক বিতর্ক, মুচমুচে গসিপ।
‘সাড়ে চুয়াত্তুর’ নামক ছবিতে প্রথম সুচিত্রা সেন-এর বিপরীতে অভিনয় করেন। একসময় কলকাতার চলচ্চিত্র পাড়ায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি ছাড়া অন্য কোন জুটি হিট হবে এমনটা ভাবাই যেত না। কিন্তু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুতে আচমকাই তাঁর সাথে সুপ্রিয়া দেবীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। অবশেষে সেই নায়িকাকেই বিয়ে করে আমৃত্যু কাটিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে।
উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের জুটি অনস্ক্রিন এতটাই রহস্যময় হয়ে উঠেছিল যে দর্শকরা ভাবতে শুরু করেছিল পর্দার বাইরেও দুজনের একটি অজানা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নানান ধরনের রটনা রটতে থাকে। তার মধ্যে আবার সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই সুচিত্রা সেনের স্বামীর আক্রোশের মুখে বারবার করতে হয়েছে উত্তম কুমারকে। শেষে সব ছেড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু উত্তম কুমারের মৃত্যু আবার তাঁকে টেনে আনলো বহির্জগতে।
মৃত্যুর আগে বেলভিউ ক্লিনিকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন উত্তম কুমার। ডাক্তারের কাছে নিজেকে বাঁচানোর অনুরোধ করতেও বাকি রাখেননি তিনি নিজে। অবশেষে সমস্ত স্টারডম ত্যাগ করে চলে গেলেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই গিরিশ মুখার্জী রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় দেহ। ততক্ষণে গোটা বাংলার মানুষ গিজগিজ করছে সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। মৃত্যুর খবর শুনেই উত্তম কুমারের বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,বসন্ত চৌধুরী, সত্য মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক দীপঙ্কর দে থেকে শুরু করে তখনকার প্রতিষ্ঠিত তারকা থেকে শুরু করে উঠছে তারকারা।
তারপর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য দেহ যখন নিয়ে যাওয়া হয় সেই সময় জনতার সমুদ্র আটকাতে গিয়ে পুলিশকে পাল্টা ইট পাটকেল খেতে হয়। মহানায়কের প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা তখন অস্থির করে তুলেছে দর্শকদের। পরপর বেশ কয়েকটি স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মহানায়কের মরদেহ। মিছিল শ্মশানের দিকে যত এগোচ্ছে ততই জনস্রোত বাড়ছে।
শেষমেষ চোখের জলে বাবাকে বিদায় জানান মহানায়কের ছেলে গৌতম। অনেকে বলেন যে এই প্রথমবার ছেলের চোখে জল দেখেছিলেন। তবে আজও টিভির পর্দায় উত্তম কুমারের কোন সিনেমা চললে জ্বলজ্বল করে ওঠে তা বাঙালির মননে।