বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়েই না! আবারও নতুন একটি বিতর্কের কেন্দ্রে এসে পড়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar)। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি ঋতুস্রাব (Periods) ও স্যানিটারি ন্যাপকিন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। মমতা শঙ্কর প্রশ্ন তোলেন, “স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে লাল রং ব্যবহার করে বোঝানো কী খুব প্রয়োজন?” তাঁর মতে, ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলেও পরিবারের পুরুষ সদস্য, বিশেষ করে বাবা বা ছেলের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
বর্ষীয়ান এই শিল্পীর বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়। সমাজ মাধ্যমে অধিকাংশ নেটিজেন এই মন্তব্যকে পিছিয়ে পড়া মানসিকতার প্রতিফলন বলে মনে করছেন। অনেকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, একজন শিল্পী এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে এভাবে ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জা বা আড়ষ্টতা ছড়ানো মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি এই প্রজন্ম এখনও ঋতুস্রাব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে না পারে, তবে কবে পারবে?” ফলে মমতা শঙ্করের বক্তব্যকে ঘিরে নেটদুনিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এসেছেন গায়িকা ‘ইমন চক্রবর্তী’ (Iman chakroborty)। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে বলেন, ছোটবেলায় তাঁর বাবা কখনও তাঁকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে দোকানে পাঠাননি। তবে মা তাঁকে শিখিয়েছিলেন যে ঋতুস্রাব জীবনের স্বাভাবিক একটি অংশ এবং নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা থাকা উচিত। সেই শিক্ষাই আজও তাঁকে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছে বলে জানিয়েছেন ইমন। তিনি বলেন, “আমার মা আমাকে বলেছিলেন, নারী-পুরুষ সমান সমান।
আজ কিছু ইন্টারভিউ দেখে মনে হচ্ছে মা বুঝি ভুল বলেছিলেন! আমার গা গোলাচ্ছে, শরীর খারাপ লাগছে।” ইমনের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ এবং হতাশা, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’-এর কথা টেনে এনে বলেন, সমানাধিকার চাওয়া কি তবে ভ্রান্ত চিন্তা ছিল? গায়িকার মতে, মমতা শঙ্করের বক্তব্য এক ধাক্কায় বহু পিছনে ঠেলে দিয়েছে সচেতনতার বার্তা। একজন শিল্পী যখন এমন মন্তব্য করেন, তখন সেটি শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত মত থাকে না—তা সমাজের বড় অংশকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুনঃ “আমি যেন শিবের মতো স্বামী হই!” “মহিলারাই শুধু ব্রত রাখবেন কেন?”— বাস্তব জীবনে দিব্যজ্যোতির ভিন্ন রূপ! ছোটপর্দার সূর্য হতে চান মহাদেবের মতো স্বামী! নির্জলা একাদশী-ব্রত, সবটাই করেন বিশ্বাস নিয়ে! দিব্যজ্যোতির ভাবনা মন ছুঁয়েছে অনুরাগীদের!
এই বিতর্ক আরও একবার সামনে এনে দিল, এখনও ঋতুস্রাবের মতো একটি স্বাভাবিক বিষয়কে ঘিরে আমাদের সমাজ কতটা অপ্রস্তুত, এবং নারীদের কণ্ঠস্বর কত সহজেই চাপা পড়ে যায় তথাকথিত সংস্কৃতি ও আড়ষ্টতার মোড়কে। ঋতুস্রাব কোনও লজ্জার বিষয় নয়—এ কথা যতবার, যতভাবে বলা যায়, ততবারই বলা দরকার। সমাজে সমতা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখতে হলে এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করা প্রয়োজন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।