“হাউ হাউ করে এমন কাঁদতাম, কখনও নাক-মুখ দিয়ে র’ক্ত বেরোত!”— নব্বইয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আজও সেই কান্না মনে রেখেছেন ‘জন্মভূমি’-র পিসিমা মিতা চট্টোপাধ্যায়! অতীতের কোন স্মৃতি আজও আবেগী করে তোলে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে?

নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছেও তাঁর শরীর ও মন এখনও চনমনে। জন্মভূমি (Janmabhoomi) সিরিয়ালের সেই অমলিন ‘পিসিমা’ ওরফে ‘মিতা চট্টোপাধ্যায়’ (Mita Chatterjee) আজও দর্শকের মনে একখণ্ড নস্টালজিয়া হয়ে রয়ে গেছেন। বয়স ছুঁয়েছে ৯০, তবু যেন সময় তাঁকে ছুঁতে পারেনি। সম্প্রতি ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ (Didi No.1) -এর মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। চঞ্চলতা আর প্রাণবন্ততার ছোঁয়া নিয়ে তিনি জানালেন তাঁর শৈশবের দুর্গাপুজোর স্মৃতি। কেমন ছিল ‘পিসিমা’র শৈশবের দুর্গাপুজো?

যেখানে নেই আজকের মতো ভিড়, আলো কিংবা জাঁকজমক, ছিল শুধুই পারিবারিক ঘরোয়া আবহের পবিত্র আনন্দ। এই প্রসঙ্গেই এক সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী জানান, তাঁর কাছে দুর্গাপুজো মানেই এক বিশেষ অনুভূতির নাম। আজকের মতো বৃহৎ আকারে সর্বজনীন পুজো না হলেও, তৎকালীন পাড়ার পুজোই ছিল আনন্দের কেন্দ্র। আনুষ্ঠানিকতা ছিল কম, ছিল আন্তরিকতা আর স্নেহের ছোঁয়া। তিনি বললেন, মা দুর্গা যেন পরিবারে আসা এক গুরুত্বপূর্ণ অতিথি।

ঐ কটা দিন যার উপস্থিতি মন ছুঁয়ে যায়। সেই স্নেহ, সেই টান আজও রয়ে গেছে তাঁর মনে। শৈশবের আরও এক স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তাঁদের বাড়িতে না হলেও পাড়ার দুর্গাপুজো ছিল বড় আকর্ষণ। আজ যে জায়গাটি দক্ষিণ কলকাতার প্রসিদ্ধ ‘২৩ পল্লির দুর্গামন্দির’, সেই সময় সেটি এত পরিচিত ছিল না। পাড়ার বড়রা মিলে বাঁশ বেঁধে গড়ে তুলতেন পূজামণ্ডপ। ছোটরা বসত শতরঞ্চিতে। তবে তাঁর নজর থাকত একটু আধটু ‘চেয়ারে বসার’ সুযোগের দিকে—যদি বাবার বা কাকার পাশে বসা যায়!

ছোট ছোট এই সুখের মুহূর্তগুলোই ছিল তার কাছে রাজ্য জয়ের মতো আনন্দ। মিতা চট্টোপাধ্যায় আরও জানান, ঠাকুরকে ত্রিনয়ন টিপ পরানোর দায়িত্বও তাঁর ওপর ছিল। সবাই তাঁকে বলতেন—তুই আমাদের ‘ছোট মা’, আর যিনি মূর্তিরূপে এসেছেন তিনি ‘বড় মা’। সেই বিশ্বাস আর দায়িত্ব তাঁর মনে এক ধরনের ভক্তি আর ভালোবাসার জন্ম দিয়েছিল। আর বিসর্জনের দিন? ছোট্ট মিতা তখন কেঁদে ভাসাতেন! হাউ হাউ করে এমনভাবে কাঁদতেন যে কখনও পড়ে যেতেন, কখনও নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোত।

আরও পড়ুনঃ গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড ছেড়ে ভোটের মাঠে! শাসকদলের রাজনীতিতে পা রাখতে চলেছেন ঋত্বিকা? ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ঋত্বিকাকে ডাকা ঘিরে জোর জল্পনা! কি জানালেন অভিনেত্রী?

সবাই বুঝিয়ে বলতেন, পরের বছর মা আসবেন আবার। কিন্তু এই বিদায়ের যন্ত্রণা তিনি সহজে মেনে নিতে পারতেন না। আজও সেই সময়ের পুজো যেন তাঁর মনে জ্যান্ত হয়ে আছে। সময় বদলেছে, পুজোর রূপ বদলেছে—তবু পিসিমা মিতা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দুর্গাপুজো মানে এখনও একটা নিঃশব্দ আবেগের বহিঃপ্রকাশ। যেখানে ছেলেবেলার সরল আনন্দ, নির্দোষ কান্না, আর মায়ের চোখে টিপ পরানোর দায়িত্ব সব মিলিয়ে তাঁকে আজও আবেগী হয়ে পড়েন সকলের প্রিয় ‘পিসিমা’।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।