‘ফোনের দিকেই চেয়ে থাকত যদি কেউ ফোন করে, কেউ খোঁজ নেয়নি…শেষেও পাশে কাউকে পেল না!’ দাদা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের মৃ’ত্যুর পর আক্ষেপ বোনের! বর্ষীয়ান অভিনেতার শেষকৃ’ত্যেও আসেননি কেউ! কেন আজ এমন উপেক্ষিত ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবীণরা?

গত রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পরলোক গমন করেছেন, বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়’ (Kalyan Chatterjee)। এদিন নীরব রাতেই শেষকৃ’ত্য সম্পন্ন হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। অথচ সেই শেষযাত্রায় টলিউডের ভিড় কোথায়? বর্ষীয়ান অভিনেতার জীবনে একসময় আলো ছড়ানো হাজার মানুষেরই ভূমিকা ছিল, কিন্তু শেষ জীবনে আর মৃ’ত্যুর পর তাঁর চারপাশটা নাকি একেবারেই ফাঁকা! এই শূন্যতার গল্পটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক, এমনটাই দাবি করেছেন তাঁর বোন। তিনি জানান, শেষদিনগুলোয় দাদা নাকি বারবার ফোন হাতে নিয়ে দেখতেন পুরনো পরিচিত বা সহকর্মীদের কেউ খোঁজ নিয়েছে কি না।

চিরচেনা নামগুলো উচ্চারণ করতেন আশা নিয়ে, কিন্তু প্রতিবারই উত্তর মিলত নীরবতা। কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন অভিনেতার শেষজীবন এমনভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে, তা ভাবাই কঠিন। চার শতাধিক ছবিতে অভিনয়, টলিউডের একের পর এক কালজয়ী ছবিতে নিজের ছাপ রেখে যাওয়া মানুষটি দিনশেষে থেকে গিয়েছিলেন শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে। দীর্ঘ অসুস্থতা তাঁর শরীরটাকে চেপে ধরেছিল ঠিকই, কিন্তু মানসিকভাবে যে অবহেলা তিনি পেয়েছেন সেটাই নাকি বেশি কষ্ট দিত তাঁকে।

তাঁর বোনের কথায়, “মানুষের মধ্যে থাকতেই দাদা ভালোবাসতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই তাঁকে সময় দেয়নি।” প্রসঙ্গত অভিনেতা ছিলেন পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র, আর্টিস্ট ফোরামের সক্রিয় সদস্য। তাঁর অভিনয়জীবনও ছিল অনন্য। ‘আপনজন’ থেকে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সাগিনা মাহাতো’ থেকে ‘জনঅরণ্য’, একের পর এক বিখ্যাত চরিত্র টলিউডকে উপহার দিয়েছেন তিনি। শুধু বাংলা ছবি নয়, বলিউডেও দেখা গিয়েছিল তাঁর উপস্থিতি ছিল সুজয় ঘোষের ‘কাহানি’ ছবিতে। সব মিলিয়ে শিল্পীর জীবনটা ছিল পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতায় ভরা।

কিন্তু পরিণতিটা হল সবচেয়ে অসম! বছরের পর বছর তিনি যখন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন, তখনও নাকি কেউই নিয়মিত খোঁজ নিত না। এই অভাববোধই তাঁকে আরও একা করে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, ইন্ডাস্ট্রির বড় পরিসরে যাঁরা একসময় একসঙ্গে কাজ করেছেন, ক্যামেরার সামনে যাঁরা তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই জীবনের শেষ পর্বে পাশে থাকেননি– এই ঘটনা শুধু একজন অভিনেতার নয়, গোটা ইন্ডাস্ট্রির বর্ষীয়ান শিল্পীদের জন্য অস্বস্তিকর বাস্তবও।

আরও পড়ুনঃ ‘সংসার সামলানোর থেকে মেয়েদের বাইরে গিয়ে কাজ করা অনেক সহজ…চাকরিজীবীদের ধৈর্য নেই, তাই সংসার ভাঙছে!’ চাকরিজীবী নারীদের ‘সহজ জীবন’ বলে কটাক্ষে মমতা শঙ্করের! বিতর্কিত মন্তব্যের ফের শুরু সমালোচনার ঝড়!

কারণ এ তো প্রথম নয়। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁরও শেষ জীবন কেটেছিল একইভাবে, আর্থিক ও মানসিক সঙ্গের অভাব নিয়ে। এমন উদাহরণ শুধু অভিনেতা নয়, বাংলার সংগীতশিল্পীদের ক্ষেত্রেও রয়েছে। আলো, ক্যামেরা, তালির মধ্যে যাঁরা অধিকাংশ জীবন কাটিয়ে দেন, তাঁদের শেষ বয়সে কেন এত অন্ধকার নেমে আসে? কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের মৃ’ত্যু যেন সেই প্রশ্নটাই আবার তীব্রভাবে তুলে ধরল, ইন্ডাস্ট্রি কি সত্যিই তার প্রবীণ শিল্পীদের ভুলে যায়? বয়স বাড়লে কি সত্যিই আর তাঁদের মূল্য থাকে না?